বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালানোর প্রায় দুই মাস পূর্তি হলেও দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা এখনো নাজুক। হাসিনাশাহী পুলিশ বাহিনীকে খুনি বাহিনী বানিয়ে জনগণে বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল আর তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এসে এই বাহিনীর বড় অংশ আত্মবিশ্বাস ও আস্থার অভাবে ভুগছেন।
তবে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অনেক কথা হলেও নাগরিক সেবা ও নগর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কথা উঠছে না তেমন। অথচ ঢাকাসহ গোটা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। রাস্তাঘাট বেহাল। জনপ্রতিনিধিদের বদলে আমলা ও প্রশাসকরা জনসেবার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও তাঁদের সংখ্যা অপ্রতুল এবং জনপ্রতিনিধি না হওয়ায় জনতার সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব বজায় থাকছে।
শুধুমাত্র মঙ্গলবারেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ১৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছে তিনজন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৬৬ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩২ হাজার ৮২ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩০ হাজার রোগীর মধ্যে গেল মাসেই আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৯৭ জন। এর অর্ধেকেই গত মাসে মারা গেছে। আর অর্ধেকের বেশি মৃত্যু হয়েছে ডিএসসিসি এলাকায়। আওয়ামী সরকারের পতনের পর সিটি কর্পোরেশনসহ বেশিরভাগ জনসেবার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কাজ স্থবির হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গুর ভর মৌসুমে মশক নিধন ছাড়াও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিক সনদ, পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তি, সামাজিক শৃঙ্খলা, রাস্তাঘাট মেরামত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে যেকোনো সমস্যায় পড়লে নাগরিকরা ছুটে যেতেন কাউন্সিলরদের কাছে। এমনকি আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনুপস্থিতিতে অনেক কাউন্সিলর সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করেছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে সরকারি আমলাদের দিয়ে যে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তাতে নাগরিক সেবার শূন্যতা পূরণ হবে না।
জনপ্রতিনিধি না থাকায় কর্মচারীরাও ঠিকমতো কাজ করছে না। ওয়ার্ড পর্যায়ে রাস্তাঘাটে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকছে। কোথাও মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। তাদের বলারও কেউ নেই। সড়কগুলো বেহাল। কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে, কোথাও কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি যাওয়ায় দিনের পর দিন রাস্তায় মৃত্যুফাঁদ তৈরি হয়ে আছে।
ঢাকা শহরের দুটি সিটি কর্পোরেশনে ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২০ জন নির্বাহী কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পালন করছেন, যাদের নাগরিক সনদসহ অন্যান্য সেবা দেয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেকজন কর্মকর্তাকে ১০-১২টি ওয়ার্ডের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। তদুপরি, জনপ্রতিনিধি না হওয়ায় জনগণের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব রয়েছে।
এর ফলে গণস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনা মারাত্মক সংকটে আছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসে কর্তৃপক্ষের উচিত আশু এই সংকট নিরসন করা।