রাজনীতিতে কেবল বিপুল জনসমর্থন আর আদর্শ থাকলেই হয় না, রাজনীতির খেলায় সফট পাওয়ার বা নরম শক্তি খুবই জরুরি। জনতার শক্তি যদি হয় হার্ড পাওয়ার, তবে মিডিয়া, সাংস্কৃতিক উইং ইত্যাদি হচ্ছে সফট পাওয়ার। পরেরটা জনতার সম্মতি উৎপাদন করে, এমনকি যখন কোনো দল বা আদর্শ বিপদে পড়ে তখন তাঁকে উদ্ধার করে বা উদ্ধার করার চেষ্টা করে। মিডিয়া, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সংগঠন, আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা এই সফট পাওয়ারের জোগান দেয়।
বাংলাদেশে অন্তত দুইবার প্রচণ্ড গণধিকৃত এবং জঘন্যতম স্বৈরাচারী শাসন করা দল আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়ার বয়ান দিয়ে দলটি বারংবার এই দেশের মানুষদের থেকে লুটেপুটে নিয়েছে। জনগণের লড়াইকে নিজেদের দাবি করে বয়ান দাঁড়া করিয়ে জনগণেরই সর্বনাশ করেছে।
কিন্তু, অদ্ভুতভাবে এই দলটির গোড়া উপড়ানো যায়নি। আমরা দেশে দেশে দেখি স্বৈরাচারদের দলগুলো নির্মূল হয়ে যায়, উধাও হয়ে যায়। কিন্তু স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসে। এর কারণ তাদের সফট পাওয়ার।
১৬ বছরের দুঃশাসন আর গণহত্যার পর, দলের নেত্রী ভিতুর মতো পালিয়ে যাওয়ার পরেও আমরা দেখি আওয়ামী সফট পাওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমে তারা খেললো হিন্দু কার্ড। দশকের পর দশক ধরে হিন্দুদের সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করা আওয়ামী লীগ প্রোপাগান্ডা করে তারাই এদেশের হিন্দুদের রক্ষক। দেশের বাইরেও নিজেদের সেকুলারিজমের একমাত্র ধারক বাহক বলে বেড়ায়।
ভারতের গোলামি করে আসা আওয়ামী লীগ হিন্দু কার্ড দিয়ে সেদেশের মিডিয়া কাপালো। এই দেশেও কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করলো। হিন্দুদের বলির পাঁঠা ও গুটি বানালো। বিপরীতে এই দেশের কোনো দল বা শক্তি জোর গলায় বলতে পারলো না যে এই দেশে হিন্দু নিধন হয়নি। অতি অল্পমাত্রায় কিছু আওয়ামী নিধন হয়েছে। তাদের ধর্মপরিচয় সেখানে মুখ্য ছিল না।
কিছুটা অস্বস্তি হলেও বাংলাদেশ সেই ফাড়া কাটিয়েছে। এরপর পনেরো আগস্টে শেখ মুজিবের শোক নিয়ে তারা খেললো সুশীল কার্ড। তাদের ১৬ বছরের উৎকট পালনের বিপরীতে মানুষ যেহেতু মুজিবকে ঘেন্না করা শুরু করেছে, তারা কাঁদুনি গাইলো আমাদেরও শোক করতে দিতে হবে।
ছাত্র-জনতা তাঁদের কাউকে কাউকে ৩২ নম্বরে যেতে বাঁধা দেওয়ায় আন্দোলন আর নতুন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো আওয়ামী সুশীল লীগ। স্বাভাবিকভাবেই, এই ফাঁদে পা দিলেন অনেক সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে নিজেদের নিয়োগ দেওয়া বিচারপতি, পুলিশ আর সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার দিয়ে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টাও চালালো। হাসিনাপুত্র জয় সরাসরি ভারতকে আহ্বান জানালো এই দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে।
আওয়ামী লীগ একটার পর একটা ষড়যন্ত্র চালাতেই থাকবে। সফট পাওয়ার থাকায় তারা থামবে না। এই বাংলাদেশ বিরোধী শক্তিকে থামানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে এদের সফট পাওয়ার ভেঙে দেওয়া। আর তারজন্য দরকার জনগণের মিডিয়া। জনগণের সাংস্কৃতিক উইং। গ্ণতান্ত্রিক শক্তিগুলো, যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে, তারা এগিয়ে না এলে আওয়ামী বিষ এদেশ থেকে পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না।