সরকারের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত ও অদূরদর্শিতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে আগামীকাল জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধ করা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামীকাল বুধবারের মধ্য এই দুটি রাজনৈতিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হবে।’
এই মুহূর্তে কি হতে পারে সরকারের পরিকল্পনা?
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনের গতি প্রকৃতি বুঝতে ব্যর্থ হয় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও দলের লোকজন। পাশাপাশি সরকারি দলের ছাত্র সংঘটন দিয়ে তাদের ওপর যে ন্যাক্কারজনক হামলা করা হয় তা আন্দোলনকে না থামিয়ে বরং আরও উস্কে দেয়।
পরবর্তীতে এই আন্দোলন থামাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ২০০ এর বেশি শিশু, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ আহত হয়, তার দায় কোনোভাবেই ক্ষমতাসীনরা এড়াতে পারবে না।
এই দায় এখন কাকে দেওয়া যায়?
সহজ হিসাব, বিএনপি-জামায়াত -শিবিরের ওপর। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনকেই বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা ও জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম হিসেবে নিজ দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে দেখানোর আওয়ামী বয়ান গত ১৫ বছরে বেশ ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত। এবারও সেটাই করেছে এবং করতে যাচ্ছে।
কীভাবে সামলানো হবে আন্তর্জাতিক চাপ?
তাই এখন যখন দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে চাপ আসছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বিচার বহির্ভূত হত্যার জবাব চাওয়া হচ্ছে, সে মুহূর্তেই এমন একটা ব্যর্থ কৌশলের দিকে যাচ্ছে সরকার। তারা ভেবে থাকতে পারেন, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেই তারা আবারও ঝাঁপিয়ে পরবে আন্দোলনে, ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও করবে, আর সরকার তাদের এই কার্যক্রম বাইরে দেখিয়ে দেখাবে যে, দেখুন যারা মারা গেছে বা আহত হয়েছে সবাই জঙ্গি সন্ত্রাসী। সেটা মনে হয় হবে না।
নীতি নির্ধারকরা বারবার একই ভুল করছেন। এটা বিএনপি জামায়াত-শিবির আন্দোলন ছিল না। দেশের সকল স্তরের ছাত্রসমাজের আন্দোলন যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাধারণ জনগণের সমর্থন।
তাই বুধবার (৩১ জুলাই) এর মধ্যেই জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন শিবিরকে নিষিদ্ধ করার যেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার, তা দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতিতে সহায়ক হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ চিন্তা বা আদর্শ শেকল বা বুলেট দিয়ে আটকে রাখা যায় না।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক