এস আলমদের কোটি কোটি মাফ, হাজার টাকার ঋণে কৃষক জেলে
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৭ পিএম
সংবাদমাধ্যমে আবারো দেশের কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের সুদ মওকুফের সংবাদ এসেছে। এস আলম, নাসা, বিসমিল্লাহ ও এননটেক্স গ্রুপকে এ সুবিধা দেওয়া হয়। এসব গ্রুপের ১৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক নাসা, বিসমিল্লাহ ও এননটেক্স গ্রুপকে ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে। আর বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের ৩ হাজার ৬১৮ কোটি স্থিতির বিপরীতে ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদীভাঙন, দুর্দশাজনিত কারণ বা বন্ধ প্রকল্পে আংশিক বা সম্পূর্ণ সুদ মওকুফ করা যাবে। তবে, এস আলমসহ অন্য তিন গ্রুপের ঋণ মওকুফের বেলায় সেসব নিয়ম মানা হয়নি।
এসব খবর অবশ্য নতুন কিছু না। কেবল সুদ মওকুফ না, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের আসলটাও অনেক সময় শোধ দেন না। এসব কারণে ইতিমধ্যেই প্রায় ধসে যাওয়া ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতে চাপ আরো বাড়ছে। পুঁজিবাদী যুক্তিতে বলা হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানকে সুদ ও ঋণ মওকুফ করে দিলে এরা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারবে। এতে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে, এসব ঋণখেলাপিদের বেশিরভাগই উৎপাদন খাতে অল্পই বিনিয়োগ করেন। বরং তাঁদের মূল উদ্দেশ্য থাকে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং বড় অংশ দেশের বাইরে পাচার করে দেওয়া। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদ ও আমলাদের যোগসাজশে তাঁরা এই লুটপাট চালিয়ে যান।
অন্যদিকে, ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় ৩৭ জন কৃষকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
গ্রেপ্তার কৃষকদের বরাত দিয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ওই কৃষকেরা। ঋণের টাকা পরিশোধ করার পরও তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মূলের পাশাপাশি অনেক কৃষক সুদ দিলেও ব্যাংকের তথাকথিত ‘কড়া নিয়ম’ তাঁদের ছাড় দেয়নি। এমনকি কিছুক্ষেত্রে ছেলের নেয়া ঋণের কারণে পিতাকেও জেলে রাখা হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক আর সামাজিক অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, ধনীরা লুটপাট করে বিলাসব্যসন আর দেশের বারোটা বাজিয়ে অর্থপাচার করলেও তাঁদের তোষামোদ করা হয় আর যাদের শ্রমে ঘামে দেশ টিকে আছে সেই গরিবদের মানুষ হিসেবে ন্যূনতম সম্মানটা পর্যন্ত দেওয়া হয় না।