তাসকিনের ঘুম-কাণ্ড কি বড় কিছু ধামাচাপা দেওয়ার উপলক্ষ্য?
আহমেদ খিজির
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৪ পিএম
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বোলিংয়ে তাসকিন আহমেদ।
সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সুপার এইট পর্যায়ে খেললেও দলের পারফরম্যান্স এবং নানারকম ঘটনায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সুপার এইটের শেষ ম্যাচে সেমিফাইনালে উঠার সুযোগ থাকলেও খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা ছিল নেতিবাচক। মাহমুদুল্লাহর মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সেমিফাইনালে উঠার জন্য আক্রমণাত্মক খেলার বদলে আশ্চর্যরকম রক্ষণাত্মক খেলেন। আর খেলা শেষে দলীয় অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত তিন উইকেট পড়ে গেলে আর চেষ্টা না করার উদ্ভট তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন। দলীয় এহেন সিদ্ধান্তের পেছনে ম্যাচ পাতানোর মতো বিষয় জড়িত কিনা এই নিয়েও সন্দেহ হয়।
টুর্নামেন্ট শেষে দল দেশে ফেরার পর সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে আরেক বিস্ফোরক তথ্য। দলের সহ-অধিনায়ক এবং কৃতি ফার্স্ট বোলার তাসকিন আহমেদ নাকি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করায় ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলতে পারেননি। বলা হয়, তিনি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করায় টিম বাস মিস করে বিকল্প উপায়ে মাঠে যান। তবে যতক্ষণে মাঠে যান ততক্ষণে দল চূড়ান্ত করার সময় পার হয়ে যাওয়ায় তিনি আর দলে থাকেননি।
অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান অবশ্য দাবি করেন, তাসকিন কয়েক মিনিট মাত্র দেরি করেছিলেন এবং এই জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। অবশ্য সাকিব এও বলেন যে, কারও জন্য টিম বাস দাঁড়ায় না, দেরি হলে রেখেই মাঠে চলে আসে।
তাসকিন অপরাধ করেছেন সন্দেহ নাই। তবে প্রশ্ন উঠে, তাসকিনকে বলির পাঁঠা বানিয়ে কি বোর্ড তাঁদের ব্যর্থতা ঢাকছেন? যদি তাসকিনকে দলে নাই নেওয়া যেতো, তবে তাঁর বদলে তো খেলার কথা আরেক পেস বোলার শরীফুল ইসলামের। কিন্তু, আমরা দেখলাম এর বদলে নেওয়া হলো আনকোড়া উইকেটকিপার ব্যাটার জাকের আলীকে। ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং দলের বিরুদ্ধে এক বোলার কমিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত সেই দিনই সন্দেহের উদ্রেক করেছিল। সংবাদমাধ্যমে ঘুম-কাণ্ডের বিবরণের পর সন্দেহ জাগে যে, টুর্নামেন্টজুড়ে নানা বিতর্ক ঢাকতেই কি তাসকিনকে ঢাল বানানো হচ্ছে।
ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা জানেন, বোর্ডের কথামতো চলেন এমন কিছু সাংবাদিক আছেন। তাঁরা নানা সময়ে বোর্ডকে রক্ষা করেন। তেমনি একজন তাসকিনের বিরুদ্ধে আরেকটা অভিযোগ এনেছেন যে, নেপালের বিরুদ্ধে খেলায় এই ফার্স্ট বোলার নাকি বিশেষ ধরনের পানীয় পান করে সকালে উঠতে দেরি করেছিলেন। ফলে, সেদিন তন্দ্রা নিয়েই খেলেন এবং খারাপ বোলিং করেন। সদা হাস্যজ্বল তাসকিন প্রচণ্ড নিয়মতান্ত্রিক জীবন বসবাস করে বলেই সকলে জানে। নানারকম ইনজুরি তিনি জয় করে দেশসেরা পেসার হয়েছেন সেই নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার কারণেই। তাছাড়াও, ব্যক্তিজীবনে ধার্মিক হওয়ায় নিষিদ্ধ পানীয়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ থাকার কথা না। ফলে, তাসকিনের ওপর দোষারোপ কিছুটা আরোপিত এ সন্দেহ অমূলক নয়।
উল্লেখ্য, বোর্ডের সভা শেষে প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান ক্ষোভ নিয়ে বলেন, তিনি নাকি কখনো বলেননি, আমাদের লক্ষ্য সামনের বিশ্বকাপ। এগুলো লোকে তাঁকে হেয় করতে বানিয়ে বলে। অথচ, উপস্থিত সাংবাদিকরা সাথে সাথে পুরোনো সংবাদ বের করে তাঁর কথা মিথ্যা প্রমাণ করেন। তবে তিনি এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশের আর সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মতো ক্রিকেট বোর্ডও ভীষণ দুর্নীতিগ্রস্ত। দলীয়করণ আর গোষ্ঠীস্বার্থই এখানে মুখ্য। আবার খেলোয়াড়দের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য বানিয়ে দলীয় বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। জবাবদিহি কমে গেছে। বোর্ডের পছন্দের কোচ খেলোয়াড়দের গায়ে হাত দেন বলেও অভিযোগ আছে। সাংবাদিকরা নানাসময় সেগুলো ধামাচাপা দেন বা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দেন।
তাসকিনের সাম্প্রতিক ঘটনায় সেই চেষ্টা হচ্ছে বলে সন্দেহ জাগাটা অস্বাভাবিক নয়। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানোর মতো সন্দেহ চাপা দিতেই হয়তো সমস্ত দোষ তাসকিনের ওপর চাপানো হচ্ছে।