Logo
Logo
×

অভিমত

রাজনীতিবিদরা এত নেতিবাচক কেন মিডিয়ায়

Icon

মার্ক কোডিংটন ও সেথ লুইস

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১১:১০ এএম

রাজনীতিবিদরা এত নেতিবাচক কেন মিডিয়ায়

গণমাধ্যম রাজনীতিবিদদের নেতিবাচক কাজের দিকে বেশি মনোযোগ দেয় এমনকি পুরস্কৃত করে যা আরও নেতিবাচকতার জন্ম দেয়। রাজনীতিকে নেতিবাচকতার প্রায় সমার্থক বলে মনে হয়। রাজনীতিবিদরা প্রায়ই বেপরোয়াভাবে বিরোধীদের আঘাত করেরাজনৈতিক সমাবেশে, আক্রমণের বিজ্ঞাপনে, সংসদের ফ্লোরে এবং টিভিতে। প্রশ্ন হচ্ছে এসব নেতিবাচকতা কি আসলে কোনো কাজ করে?

দ্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব প্রেস/পলিটিক্স-এ জেলজকো পোলজাকের একটি নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে যেখানে বেশ কিছু চিত্তাকর্ষক উত্তর পাওয়া যায়।

প্রথমত, রাজনীতিবিদ বা নির্বাচনের প্রার্থীরা যখন একে অপরের সমালোচনা করে তখন এটি নিতান্তই খারাপ জিনিস নয়। এটি রাজনীতির প্রতি জনসাধারণের মনোযোগ বাড়াতে পারে। এমনকি জনগণকে গণতন্ত্রের প্রতি আরও সন্তুষ্ট করতে পারে। এর কারণ, সম্ভবত, এ থেকে ভোটাররা আরও স্পষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পায়।

আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, রাজনীতিবিদদের নেতিবাচকতা (বিশেষ করে যখন এটি অসভ্যতায় পরিণত হয়) সমাজের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে, যেমন কম ভোটার উপস্থিতি, রাজনীতির প্রতি বৃহত্তর অসন্তোষ, এবং এমন ধরনের আরও মেরুকরণ।

সমাজের জন্য ফলাফল যাই হোক না কেন, রাজনীতিবিদরা আক্রমণ করেন, কারণ তারা মনে করেন, এটি তাদের ভোটের জন্য কাজ করে। তারা বিশ্বাস করেন যে, প্রতিপক্ষকে অসম্মান করা তাদের মৌলিক কাজ। এটা অবশ্যই সেভাবে মনে হতে পারে। তবু, গবেষণায় দেখা গেছে, ধরনের নেতিবাচকতার বুমেরাং প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এমনভাবে আক্রমণ করলে এই নেতিবাচক রাজনীতিবিদদের রেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং অন্য প্রার্থীদের সুবিধা হতে পারে।

তাহলে কেন রাজনীতিবিদরা এ রকম আচরণ করেন?

কারণ যাই হোক, সাংবাদিকরা কেন নেতিবাচকতাকে প্রাধান্য দেন?

পোলজাক দেখেছেন, নেতিবাচক সংবাদে শ্রোতাদের আগ্রহ বেশি। এ কারণে নেতিবাচকতার প্রতি মিডিয়ার পক্ষপাত।

সমাজের উপর নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও কেন রাজনীতিবিদরা নেতিবাচকতা ব্যবহার করেন সে বিষয়ে পোলজাক অনুমান করেছেন, নেতিবাচক সংবাদ কভারেজের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিশেষত, যদি রাজনীতিবিদরা নেতিবাচকতার অসভ্য রূপ ব্যবহার করেন তা সংবাদ হিসেবে বেশি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়।

পোলজাক পরীক্ষা করে দেখেছেন, একটি বহুদলীয় ব্যবস্থায়, যেমন বেলজিয়ামে, রাজনীতিবিদদের আইন পাস করতে বা সরকার গঠন করতে পরস্পরের ওপর নির্ভর করতে হয়। কোয়ালিশন করতে হয়। ফলে সেখানে তাদের নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় নেতিবাচকতা বেশি। কারণ সেখানে এক দলই সরকার গঠন করে। ফলে সেখানে মিডিয়া সেই নেতিবাচকতাকে আরও ফোকাস করে।

পোলজাক বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বেলজিয়ামে ফেডারেল পার্লামেন্টের একটি ইভেন্টে রাজনীতিবিদরা কতবার নেতিবাচকতা ব্যবহার করেছেন এবং তারপরে টিভি সংবাদে একই রাজনীতিবিদদের কতবার কভার করা হয়েছে। তার সাথে পোলজাক তুলনা করেছেন যারা নেতিবাচকতা ব্যবহার করেননি। ওই দিনের পর নেতিবাচকতার কারণে একই রাজনীতিবিদদের মিডিয়া আবার নেতিবাচক দিকে নিয়ে যায় কিনা তাও পোলজাক পর্যবেক্ষণ করেছেন। সব মিলিয়ে পোলজাক ৩৬৭ জন রাজনীতিবিদ তাদের হাজার হাজার বক্তব্য ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছেন।

নেতিবাচকতা অসভ্যতার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করা যাক। যদি বলি, পলিটিশিয়ান এক্স পলিটিশিয়ান ওয়াইকে নীতিগত বিরোধের ভিত্তিতে আক্রমণ করেন তাহলে সেটা নেতিবাচক, কিন্তু এক্স যদি উপহাস বা নাম-ডাক করার উপায় হিসেবে ওয়াইকে আক্রমণ করেন তাহলে সেটা নেতিবাচক এবং অসভ্য।

রাজনীতি এমন হতে পারে যেখানে সামাজিক নিয়ম ভঙ্গ সামাজিক সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাহলে, রাজনীতিবিদদের নেতিবাচকতাকে মিডিয়ায় হাইলাইট করলে কী হচ্ছে?

পোলজাক বলছেন, একবার তারা নেতিবাচকতার কারণে মিডিয়ায় অ্যাক্সেস পেয়ে গেলে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবার তারা নেতিবাচক হবে সেই সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

রাজনীতিবিদরা মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্য তাদের আচরণ পরিবর্তন করেন। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া যুগেও, পোলজ্যাক বলছেন, রাজনীতিবিদরা সংবাদ মাধ্যমের মনোযোগ নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। এ জন্য তারা সাংবাদিকদের আক্রমণও যেমন করেন তেমনি সাংবাদিকদের কাছে মজাদার হওয়ারও চেষ্টা করেন। তবে যেহেতু মানুষ নেতিবাচক তথ্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়, রাজনীতিবিদরা সেই চেষ্টায় বেশি আগ্রহ দেখান।

প্রশ্ন হলো, সাংবাদিকরা কীভাবে নেতিবাচকতার ওপর ফোকাস করে যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর? প্রশ্নটি সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ সংবাদ শ্রোতাদের জন্য ভিন্নভাবে বিবেচনা করার মতো, যা রাজনীতির মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

(নিয়েমানল্যাব ডট অরগ থেকে অনুবাদ)

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন