বিটিভি ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম

জুলাই গণহত্যায় হাসিনার আস্থাভাজন বিটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামান, উপ-মহাপরিচালক (বার্তা ) সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন। মানববন্ধন শেষে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আজ সোমবার এই মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি ও বাংলা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের যোদ্ধা ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আরিফ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ডিআরইউয়ের আপ্যায়ন সম্পাদক দৈনিক মানবকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার সলিমউল্লাহ মেজবাহ, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাফর আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম কাজল, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের স্থায়ী সদস্য খান কামরুল হুসাইন, সদস্য দিলিপ কুমার, সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, ও সাংবাদিক রোজিনা আক্তার সহ প্রমুখ।
মানববন্ধনে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি ও বাংলা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার বলেন, ছাত্র -জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও তার এবং সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের আস্থাভাজন বিটিভির উপ -মহাপরিচালক (বার্তা) সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও মুখ্য বার্তা সম্পাদকমুন্সী ফরিদুজ্জামান বহাল তবিয়তে রয়েছেন বিটিভিতে। উল্টো বিটিভি নিউজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উইং এর সদস্য এই মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয় ২০২৪ এর ৭ জুলাই বিটিভি কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের আন্দোলন দমনে এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ আরাফাতের নির্দেশে মিথ্যা প্রোপাকাণ্ডের যে সংবাদ প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেই কমিটির প্রধান করা হয় নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলমকে। যার স্মারক নম্বর -১৫.৫৪.৩০২৫.০২৫.১৮.০০২.২২.১৫৭। দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি ছাত্র হত্যার নেতৃত্বদানকারী শামসুল আলম এখন বিটিভির হয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সদস্য। একমাত্র রাষ্ট্রীয় এ টেলিভিশন চ্যানেলে হাসিনার আস্থাভাজনদের হাতে কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার বলেন, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মহসিনের প্রভাবে স্ত্রী তাসমিনা আহমেদ ও মুন্সী ফরিদুজ্জামান এখনও বড় অঙ্কের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়সহ সব ম্যানেজ করার দাম্ভিকতা দেখাচ্ছে। যার ফলে হাসিনা পালানোর ১ বছর পার হলেও তাদের বিষয়ে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ফরিদুজ্জামান ও তাসমিনা গংদের হাত ধরেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ভিডিওচিত্র যাচ্ছে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে এমন অভিযোগ বিটিভির একাধিক সূত্রে জানা যায় বলেও জানান তিনি।
বিটিভির একটি তদন্ত কমিটি রিপোর্টর অনুযায়ী, সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম (অতিরিক্ত সচিব-পিআরএল ভোগরত) এবং উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান ও বার্তা) ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নেতৃত্বে ঢাকা কেন্দ্রের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব) মাহফুজা আক্তার ও তার সিন্ডিকেট সদস্যরা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ভুয়া বিল ভাউচার ও বাজেটের মাধ্যমে ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির করেছেন মর্মে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দাখিল করে।
অপরদিকে, গত ৩০/০৪/২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা দল কর্তৃক দাখিলকৃত বিশেষ অডিট রিপোর্টেও ১০,৪৪,২২,০৭৯/- টাকা অনিয়মসহ অডিশন কেলেঙ্কারি, জালিয়াতি ও আরো দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর প্রমাণ মিলেছে। শুধুমাত্র সাবেক জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারকে বদলি করা হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ। দুদক থেকেও স্বামীর প্রভাবে মামলা থেকে নাম কাটান তিনি। শুধু তাই নয় বিটিভিতে শিল্পী তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের সাথে জড়িত কমিটির আহ্বায়ক তাসমিনাকে নিয়ে যখন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে তদন্ত চলছে তাকেই কোন ক্ষমতাবলে বর্তমানে বিটিভির উপ-মহাপরিচালক (বার্তা ) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হল তাতে হতবাক সকলেই।
অপরদিকে , শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উইং এ ছিলেন বিটিভির মুন্সী ফরিদুজ্জামান। সেসময়কার তার বন্ধুমহলের অধিকাংশ এখন পলাতক কেউবা জেলে। বর্তমানে কখনও তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা , কখনও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের নাম ভাঙিয়ে দাপটের সাথে বিটিভি নিউজকে হরিলুটের আখড়ায় পরিণত করেছেন এই মুন্সী ফরিদ। সব সময় উপর মহল ম্যানেজের দাম্ভিকতা দেখান তিনি।
২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন -মইনুদ্দিনের শাসনামলে ওয়ান ইলেভেনের কারিগরদের সাথে যোগসাজশে বিটিভির হয়ে যোগ দেন তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদের প্রেস উইং এ। পরবর্তীতে হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে এইচ টি ইমাম ও মাহবুবুল আলম শাকিলের গড়া মিডিয়া সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়ে বিটিভি সংবাদকে একপেশে করে ফেলে। কেউ প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুত বা বদলির হুমকি দিতেন মহাপরিচালকের মাধ্যমে।
২০০৮ এ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই তার প্রেস উইং এ বিটিভির পক্ষ থেকে যুক্ত করেন মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে। একটা পর্যায়ে এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েন তিনি বিদেশ ট্যুরের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি শাখাওয়াত মুনের সঙ্গে। অফিস বিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাকে দেয়া হয় বিভাগীয় মামলা। শাস্তিস্বরূপ পান পদাবনতি অর্থাৎ চলমান পোস্ট থেকে একধাপ নিচে নামিয়ে দেয়া হয়। বিভাগীয় আদালতে আপিল করেও ফিরে পান না পদ। অবশেষে তার আপা ( শেখ হাসিনা ) বিশেষ ক্ষমতাবলে চাকরির পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
ফরিদুজ্জানের প্রতি এতটাই হাসিনার আস্থাশীল ছিল পরবর্তীতে তার সিনিয়রকে ( বর্তমানে বিটিভির জেনারেল ম্যানেজার নুরুল আজম পবন ) ডিঙিয়ে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে বিটিভিতে নিয়োগ দেয় ফ্যাসিস্ট হাসিনা। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এতটাই বিশ্বস্ত ছিলেন সেই সময় মুন্সী ফরিদের কাছে তুলে দেওয়া হাছান মাহমুদের একজন নিউজ প্রেজেন্টার এখনও বীরদর্পে খবর পড়ছেন বিটিভি নিউজে। বর্তমান জিএম বাধা দিলেও বলেন উপরের নির্দেশে তার নিউজ চলবে ? তবে কি উপর বলে বর্তমান সরকারকেও বিব্রত করার চেষ্টা করছেন এই ফরিদুজ্জামান।
শুধু তাই নয় জুলাই আন্দোলনে শুধুমাত্র পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট করায় রিপোর্টার এ কে এম শহীদুল্লাহকে জুলাই মাসের প্রাপ্ত সম্মানী কেটে দিয়ে অফিস ডিউটি থেকে দুরে রাখেন। ৫ আগস্ট বিজয়ের পর ফোন করে সেই রিপোর্টারকে অফিসে এনে নিজেকে তাৎক্ষণিক জুলাই যোদ্ধা ঘোষণা করেন। যদিও পরবর্তীতে ১৩ বছর কাজ করা সত্ত্বেও উক্ত রিপোর্টার কাজ পারেনা এমন অভিযোগ এনে বিনা নোটিশে তাকে চাকুরিচ্যুত করেন। মুন্সী ফরিদের এ কাজে যিনি সহযোগিতা করেন তিনি হলেন বিটিভির উপ মহাপরিচালক বার্তা সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ। যার স্বাক্ষরে ঘটে সব অন্যায় অবিচার। মন্ত্রণালয়ের কথা বলে বিটিভির সকল জেলা প্রতিনিধিদের চাকুরিচ্যুত করা হলেও এব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিষয়টি তারা কিছুই জানেনা। অবশেষে হাইকোর্ট সকল ৪২ জন সংবাদ প্রতিনিধিকে পুনর্বহালের রায় দেয় । তবে কি নতুন করে সংবাদদাতা নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশেই তাদের মন্ত্রণালয়ের নাম ভাঙানো ?
তবে তাসমিনা -ফরিদ হাছান মাহমুদের কতটা আস্থাভাজন ছিলেন তার প্রমাণ মিলে সকল সংবাদ প্রতিনিধি ব্যাড দিলেও হাছান মাহমুদের সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম প্রতিনিধি সাজ্জাদকে শুধুমাত্র বহাল রেখেছে। নতুন করে পরীক্ষিত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিটিভি নিউজে নিয়োগ দিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের কাজ হাতে নিয়েছে এই চক্র।
মানববন্ধনে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার বলেন, গত ২৯ মে ২০২৪ তারিখে ২০২৪-এর কথিত জাতীয় নির্বাচনে বিটিভির সংবাদ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB) প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বিটিভি সংবাদ সাড়ে ৪ কোটি টাকা অপচয় করেছে। ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ একমাত্র উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) এবং মুন্সী মো. ফরিদুজ্জামান একমাত্র মুখ্য বার্তা সম্পাদক হিসেবে এই অনিয়ম-দুর্নীতির দায় কোনও ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না কিন্তু অদ্যাবধি তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিষয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তাসমিনা ও মুন্সী ফরিদ গং তাদের অবস্থান ধরে রাখতে তাদেরই আস্থাভাজন নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলমকে বিটিভির পক্ষ থেকে যুক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এ। নিয়ম ভেঙে নিউজের কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে। এক্ষেত্রেও নাম ভাঙানো হয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের। আর শামসুল আলম তাদের আস্থাভাজন হবার কারনতো একটা রয়েই গেছে ২০২৪ এর ৭ জুলাই বিটিভি কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের আন্দোলন দমনে এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ আরাফাতের নির্দেশে মিথ্যা প্রোপাকাণ্ডের যে সংবাদ প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেখানে শামসুল আলমকে প্রধান করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। যার স্মারক নম্বর -১৫.৫৪.৩০২৫।০২৫.১৮.০০২.২২.১৫৭। দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি ছাত্র হত্যার নেতৃত্বদানকারী শামসুল আলম এখন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সদস্য। বিটিভি থেকে শামসুল ইসলামের মনোনয়ন হিসেবে বলা হয় বর্তমান প্রেস সচিবের চাহিদা ? সত্যি কি তাই ? আদৌ কি জানতেন তার সম্পর্কে বর্তমান প্রেস সচিব জুলাইযোদ্ধা শফিকুল আলম?