রাজধানীর জুরাইনে চিরশায়িত হবেন বদরুদ্দীন উমর

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৭ পিএম
-68bd52503efc6.jpg)
লেখক, গবেষক ও মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরকে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে আগামীকাল সোমবার দাফন করা হবে। তার আগে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল ১০টায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হবে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হবে তাঁর জানাজা। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফয়জুল হাকিম জানান, আগামীকাল সকাল ১০টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাদ জোহর পারিবারিক আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বদরুদ্দীন উমরের জানাজা হবে। এরপর তাঁকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
আজ রবিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে বদরুদ্দীন উমর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। বার্ধকব্যজনিত নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি।
১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর। তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক।
১৯৫০ সালে পরিবার ঢাকায় চলে আসে। বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন উমর। স্নাতক শেষ করে ১৯৫৫ সালে দর্শনে মাস্টার্স করেন। এরপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে (পিপিই) ডিগ্রি নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়ার সময়েই খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে, তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সেখানেই তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।
ষাটের দশকে প্রকাশিত তার ‘সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সংস্কৃতির সংকট’ এবং ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ বই তিনটি তাকে চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছাড়েন। তখন থেকেই তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং লেখালেখিকে নিজের প্রধান কাজ করে তোলেন।
তার লেখা "পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি" ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী। ছিলেন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ২০০৩ সালে গড়ে তোলেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল।
চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। তার ভাষায়, “এমন অনেক পুরস্কারের প্রস্তাব আগেও পেয়েছি, কখনোই গ্রহণ করিনি।”
শ্বাসকষ্ট আর রক্তচাপের সমস্যায় বেশ কিছুদিন ধরেই দুর্বল ছিলেন। তার শেষ দিনগুলো কেটেছে পরিবারের সদস্যদের স্নেহে ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সান্নিধ্যে। এই ক্ষণজন্মা মানুষটির চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে এক শূন্যতা তৈরি হলো, যেটা সহজে পূরণ হবার নয়।