
সকালের আলো তখনো পুরোপুরি উঁকি দেয়নি। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পথে চলছিল নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবোঝাই বাস। আনন্দ পরিবহনের বাসটি যখন কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সামনে পৌঁছায়, তখন হঠাৎই ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সোজা গিয়ে পড়ে রহমতখালী খালের পানিতে। হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই বদলে যায় বহু মানুষের সকাল।
প্রথমে জানা গিয়েছিল দুজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় খালের নিচ থেকে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচজনে।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। উদ্ধার কাজ শুরু হয় সঙ্গে সঙ্গে।
স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ায়। কেউ দৌড়ে আসে গামছা নিয়ে, কেউবা ছোট নৌকা ঠেলে খালে নামে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল বাসের ভিতর আটকে পড়াদের বের করতে চেষ্টা চালায়।
চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারেননি কেউ। আতঙ্ক, কান্না আর চিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের নাম এখন পর্যন্ত জানা গেছে—মোরশেদ আলম, জয়নাল আবেদীন ও হুমায়ুনুর রশিদ। তবে তারা কোন এলাকার, কী কাজে কোথায় যাচ্ছিলেন—সেইসব তথ্য এখনও অজানা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক জানান, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও তার প্রাণ রক্ষা করা যায়নি।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটিমাত্র বাস কতগুলো জীবন থমকে দিতে পারে, তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রহমতখালী খালের এই ঘটনা।
সকালটা আর স্রেফ সকাল রইল না। কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও স্বামী—পানির নিচে হারিয়ে গেল জীবনের গল্প।
পথে বের হলে যেন কেউ আর ফিরেও না আসতে পারে—এই ভয় আবারও বুকের ভিতর চেপে বসে লক্ষ্মীপুরবাসীর।
এই ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—রাস্তায় বের হওয়া প্রতিটি মানুষ কি নিরাপদ?