বাঁকখালী নদী উচ্ছেদ ঘিরে উত্তেজনা: কক্সবাজারে সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ

কক্সবাজার শহরের গুনগাছতলা এলাকায় বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকায় জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যৌথভাবে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে দখলদারদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয়রা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে টায়ার পোড়ায় এবং উচ্ছেদে ব্যবহৃত একটি এস্কেভেটর ভাঙচুর করে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদেরকেও ঘিরে ধরে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াস খান জানান, “বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।” তবে অবরোধের কারণে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যার ফলে যাত্রীরা আসতে বা বের হতে পারছেন না।
বাংলাদেশে নদী দখল একটি দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর সংকট। নদী রক্ষাবিষয়ক সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং নদী রক্ষা কমিশনের একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, দেশের প্রায় ৬৫% নদীই কোন না কোনভাবে দখল বা দূষণের শিকার।
নদী দখলের কিছু ভয়াবহ চিত্র:
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী ক্রমাগত দখলের কবলে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বাঁকখালী, কর্ণফুলীসহ অন্তত ২০টির বেশি নদী দখলদারদের অব্যাহত হুমকিতে।
নদী দখলে সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এবং কিছু ক্ষেত্রে সরকারি সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানও।
বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ২ কিলোমিটার নদী চিরতরে বিলীন হয়ে যায়, যার পেছনে প্রধান কারণ অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত স্থাপনা ও দূষণ। অথচ নদী শুধু পরিবেশ নয়, দেশের অর্থনীতি, কৃষি, মৎস্য এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশবিদ ও পরিকল্পনাবিদরা বারবার বলে আসছেন, উচ্ছেদ অভিযান জরুরি হলেও তা হতে হবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। একই সঙ্গে দরকার স্থানীয় জনসচেতনতা ও বিকল্প পুনর্বাসন ব্যবস্থা।
বাঁকখালী নদী রক্ষায় যেসব দখলদার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠছে, সেটি শুধু আইনের অবমাননা নয়, বরং নদী ও পরিবেশ ধ্বংসের সরাসরি ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।