বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ৮ বছর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার আট বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানাচ্ছে বার্মার রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর প্রতি— যারা সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান অব্যাহত রাখার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এছাড়া বার্মা থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানাই।”
এ প্রশংসা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন কক্সবাজারে তিন দিনের স্টেকহোল্ডার সম্মেলন শুরু হয়েছে। সোমবার পূর্ণ হবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পলায়নপথের আট বছর। কক্সবাজারের এই সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখান থেকে পাওয়া প্রস্তাব ও বক্তব্য আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের পর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছিল। জাতিসংঘ সে সময় এই হত্যাযজ্ঞকে বলেছিল ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’। যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে ঘোষণা করে।
সেই সময় থেকে উখিয়া-টেকনাফের বিস্তীর্ণ এলাকা ভরে যায় বাঁশ আর প্লাস্টিকের অস্থায়ী ঘরে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে রূপ নেয় উখিয়ার কুতুপালং। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সম্মত হয় এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে। তবে ২০১৯ সালে দু’বার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় তা ব্যর্থ হয়।
এরপর করোনাভাইরাস মহামারী এবং ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের পর প্রত্যাবাসন প্রশ্নটি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার সুনির্দিষ্ট ফল পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করে আসছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে পারেনি, যার ফলে প্রত্যাবাসন এগোয়নি।
এ অবস্থায় রোহিঙ্গা আশ্রয়ের আট বছর পূর্ণ হলেও তাদের প্রত্যাবাসন এখনো অচল অবস্থায়। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।