১৪ জেলায় নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ও সংস্কার করছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম
দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পায়ন, নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও ২০টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে খরচ হবে প্রায় ৬৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অগ্নিকাণ্ড, সড়ক ও নৌদুর্ঘটনার মতো বিপর্যয় ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিও এখানে অনেক বেশি, কারণ টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষ অঞ্চলে অবস্থিত আমাদের দেশ। তবে যথাযথ সরঞ্জামের অভাব থাকলেও এসব দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ এই দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা জোরদার করতে ২০টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ এবং সংস্কার করা হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ১৪টি জেলার ফায়ার সার্ভিসের সেবার আওতার বাইরে থাকা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব স্টেশন নির্মাণ এবং সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে ১২টি হবে নতুন স্টেশন এবং ৮টি স্টেশনের সংস্কার করা হবে।
২০২৫ সালের জুলাই থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সরকারের অর্থায়নে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। পাশাপাশি গণপূর্ত অধিদপ্তরকেও এই কর্মযজ্ঞে যুক্ত করা হবে।
এ ছাড়া পরিবর্তিত দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষায়িত ইউনিট গঠন এবং সারা দেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যক্রম সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই প্রকল্পের নথি ইউএনবির হাতে এসেছে। নথি অনুযায়ী, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় ধরনের দুর্যোগে দ্রুত ও কার্যকর সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে সম্পদ ও প্রাণহানি কমিয়ে দেশকে একটি শক্তিশালী দুর্যোগ নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।
নথিতে বলা হয়েছে, দেশে শিল্পায়ন ও নগরায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এখন রাসায়নিক দুর্ঘটনা, ভবন ধস, বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেল শোধনাগার ও কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার মতো ঘটনা বাড়ছে।
এসব দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ফায়ার স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রকল্পের প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— মূল ভবন, ইউটিলিটি ও আবাসিক ভবন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ টাওয়ার, রিসেপশন এলাকা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহ।
এ লক্ষ্যে ছয়টি বিভাগের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলায় স্টেশন নির্মাণের জন্য মোট ৮.৭১ একর জমি অধিগ্রহণ বা ক্রয় করা হবে।
প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে— ২০টি ফায়ার স্টেশনের মূল ভবন নির্মাণে ২১১ কোটি ৮২ লাখ ২৭ হাজার টাকা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ১২ কোটি ৮ লাখ টাকা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণে ৪৯ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ইউটিলিটি ও আবাসিক ভবনে ৮০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা; ড্রেন, প্রশিক্ষণ টাওয়ার, রিসেপশন, ওয়াকওয়ে ও জ্বালানি গুদাম নির্মাণে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা; জমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়ে ৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ৯১ কোটি টাকা এবং অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম কিনতে ১৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের উদ্দেশ্য পূরণেও সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের আওতা বাড়বে, সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও জোরদার হবে। এতে করে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর দুর্যোগ মোকাবিলা আরও সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।