গণঅভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় ১৬ জনের বিচার শুরু

আশুলিয়ায় গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় ছয়জনকে হত্যা করে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। বৃহস্পতিবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ দেন। আদালত এদিন আসামিপক্ষের দায়মুক্তির আবেদনও নাকচ করে দেয়।
তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর।
১৬ আসামির মধ্যে যারা কারাগারে আছেন, তাদের আটজনকে সেদিন আদালতে হাজির করা হয়। তারা হলেন— ঢাকা জেলার পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই শেখ আফজালুল হক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান এবং কনস্টেবল মুকুল। শুনানির সময় আসামি শেখ আফজালুল হক নিজের অপরাধ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান।
এ মামলার অপর আট আসামি এখনো পলাতক। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং পুলিশের সাবেক এসআই বিশ্বজিৎ সাহা। অনুপস্থিত আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র খরচে দুইজন আইনজীবী নিয়োগ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশন গত ২ জুলাই ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করা হয় ৩১৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র, ৬২ জন সাক্ষীর তালিকা, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ এবং দুটি পেনড্রাইভ। অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত পলাতক আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর ৭ আগস্ট শুরু হয় অভিযোগ গঠনের শুনানি, যা শেষ হয় ১৩ আগস্ট। শুনানি শেষে ২১ আগস্টকে আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছিল।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন এবং একজন গুরুতর আহত হন। পরে নিহতদের মরদেহ ও আহত ব্যক্তিকে পুলিশ ভ্যানে তুলে সেখানে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি ও আবুল হোসেন। আরেকজনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার এক মাস পর, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। শুরুতে ১১ জনকে আসামি করা হলেও পরবর্তী তদন্তে আসামির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ জনে।