
দেশের জ্বালানি খাতে প্রতিদিনই কমছে গ্যাসের মজুদ, বাড়ছে না বিদ্যুৎ সঞ্চালনের পরিমাণ—এমন অভিযোগ তুলে আগামীতে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার (১০ আগস্ট) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫’ শীর্ষক সেমিনারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ম. তামিম বলেন, সরকার জ্বালানি খাতের বকেয়া শোধ করতে সক্ষম হলেও ভর্তুকি কমাতে পারেনি এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে, যেখানে চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ২০২৫ সালে গ্যাসের অভাব বেড়ে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়াবে—যা আগামীতে আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তামিম।
তিনি বলেন, “২০৩৫ সালে পেট্রোবাংলা গ্যাস মজুদের পরিমাণ ধরেছে ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ তারা ধরে নিয়েছে দেশে আর নতুন করে গ্যাসের মজুদ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেখানে জ্বালানির ৭০ শতাংশ গ্যাস নির্ভরশীল, সেখানে গ্যাসের এ অভাব অত্যন্ত শঙ্কাজনক।”
বিদ্যুতের বিষয়ে তামিম জানান, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট হলেও সঞ্চালন সক্ষমতা ১৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, যেখানে সঞ্চালন হয় প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। ২০৩০ সাল অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে ২৬ হাজার মেগাওয়াটে। অল্প সময়ের মধ্যে সঞ্চালন সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে ভুগতে হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
জ্বালানি বিষয়ে একই শঙ্কা ব্যক্ত করে আরেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এজাজ হোসেন বলেন, “বর্তমানে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা; সেই দিন দূরে নয় যখন ১০০ টাকা খরচ করলেও এক ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে না।”
অনেকে বলেন, আমদানি করে গ্যাস আনা হবে; কিন্তু যেসব পাইপলাইন রয়েছে সেগুলো ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অথবা ভঙ্গুর। তাই ইচ্ছামতো আমদানি করে গ্যাস আনা যাবে না বলে মনে করেন তিনি।
অভিযোগ করে জানান, যাকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে অতিরিক্ত আরও দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। এতে কাজের চাপ বেড়েছে এবং অগ্রগতি হয়নি। এক বছরে এত বড় মন্ত্রণালয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি, এমনকি পরিবর্তন আনতে দৃশ্যমান কোনো চেষ্টাও করা হয়নি।
জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “প্রতিটি মিল মালিক জ্বালানি সংকটে ভুগছে। একদিকে গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ, অন্যদিকে ব্যাংকের উচ্চ সুদহার—সব মিলিয়ে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
জ্বালানি পরিকল্পনার অভাব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “সরকার এক এক সময়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম এক একভাবে নির্ধারণ করে। দেশে কোনো নীতির স্থায়িত্বের গ্যারান্টি নেই।”
তিনি বলেন, সরকারে জ্বালানি খাতে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া উচিত। এতে ব্যবসায়ীরাও সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেদের রূপরেখা সাজাতে পারবেন।