দেশের তিন দ্বীপ এক হচ্ছে, গঠিত হচ্ছে নতুন ভূমি

মেঘনার মোহনায় ধীরে ধীরে এক হয়ে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের তিনটি দ্বীপ—সন্দ্বীপ, স্বর্ণদ্বীপ (পুরোনো নাম জাহাইজ্জার চর) ও ভাসানচর। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পারসোর সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, নতুন ভূমি সৃষ্টির ধারায় এই তিন দ্বীপ এখন প্রায় একটি বিস্তৃত ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। পলিমাটির স্তরে স্তরে বদলে যাচ্ছে মানচিত্র, বদলে যাচ্ছে উপকূলের জীবন।
এই নতুন ভূমির একটি বড় অংশ এখন পরিচিত ‘সবুজ চর’ নামে। আয়তনে প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার, যার অনেকটাই এখনো জনবসতি-বিহীন বিরান। তবে নদীভাঙনে ঘরহারা মানুষ আবার ফিরছেন পুরোনো ভূমিতে। কেউ ঘর তুলছেন, কেউ জমিতে চাষ করছেন, কেউ গবাদিপশু নিয়ে ফিরছেন আশার ঠিকানায়।
এই ভূখণ্ড শুধু প্রকৃতির উপহার নয়, এটি অর্থনীতির সম্ভাবনা, সামাজিক পুনর্বাসনের সুযোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে বাংলাদেশের নতুন প্রতিবর্ণনাও। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৯ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সন্দ্বীপের আশপাশে নতুন ভূমি বেড়েছে ১২১ শতাংশ, যা এক নজিরবিহীন ভৌগোলিক রূপান্তরের সাক্ষী।
তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই নতুন ভূমিতে বসতি গড়তে হলে সময় নিতে হবে। অন্তত ২০ বছর পর্যন্ত এসব ভূমি পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এবং ভূপদার্থবিদেরা বলছেন, চরভূমির স্থায়িত্ব নিশ্চিত না করে আগেভাগে বসতি গড়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এই ভূমিতে ইতোমধ্যেই প্রায় সাত হাজার পরিবার গবাদিপশু, ধান ও সামুদ্রিক মাছ চাষের মাধ্যমে জীবিকা গড়ে তুলেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, সবুজ চর থেকে বছরে উৎপন্ন ধান প্রায় ২০ হাজার টন, যা দেশের অন্যতম বৃহৎ ধানভাণ্ডার। পাশাপাশি মৎস্য সম্পদের বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
তবে মালিকানা ও বন্দোবস্ত নিয়ে এখনো কোনো সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দখল ও সহিংসতার ঝুঁকিও রয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এখনো দিয়ারা জরিপ হয়নি, তবে তা প্রয়োজন।
অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, “এই ভূমি শুধু নতুন মাটি নয়, এটি এক নতুন জাতীয় প্রশ্নপত্র—আমরা কীভাবে আমাদের নদী, ভূমি ও মানুষকে দেখি, তা এখানেই নির্ধারিত হবে।”
এখন সময় এই নতুন ভূমিকে কেবল ভূগোল হিসেবে না দেখে তাকে পরিকল্পিতভাবে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা হিসেবে গড়ে তোলার। এটি ইতিহাসের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা এক সবুজ গল্প, যার পরতে পরতে আছে ফিরে আসার স্বপ্ন।