
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে, যেখানে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ বুধবার আসামিদের দায়মুক্তির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
বিচারপতিমণ্ডলীর বাকি দুই সদস্য হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন ছয়জন হাজতবাসরত আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তারা হলেন—পূর্বের সাবেক উপপরিদর্শক আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশ, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ আপিল। আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনালে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল তাদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে দেয় এবং ৩০ জন আসামির বিরুদ্ধেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে। যেহেতু বাকি ২৪ জন এখনও গ্রেপ্তার হয়নি, তাই তাদের পলাতক দেখিয়ে বিচার চলবে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আদালত তাদের জন্য চারজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে, যারা শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও প্রসিকিউশনের প্রাথমিক বক্তব্যের জন্য আগামী ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে ছাত্র বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু ঘটে। দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পুলিশ গুলি চালায়—এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ১৭ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর সহিংসতা ও দমন-পীড়নের মধ্যেই ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় তৎকালীন সরকার।
দ্রুত চলতে থাকা রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান ঘটে। তিনি পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান।
নতুন অন্তর্বর্তী সরকার তখন জুলাই মাসের এই আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে বিচার শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেই প্রেক্ষিতে আবু সাঈদ হত্যার মামলাও ট্রাইব্যুনালে আসে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ৩০ জন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এবং পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
পরবর্তীতে ১৩ জুলাই পলাতক ২৪ আসামিকে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলার প্রেক্ষিতে শুরু হওয়া বিচারিক কার্যক্রম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।