সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়
৪০ শতাংশ অনলাইনে, ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীরে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম

ঢাকা মহানগরীর সরকারি সাত কলেজের জন্য প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে। আর বাকি ৬০ শতাংশ ক্লাস সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। আজ সোমবার সচিবালয়ে ঢাকা মহানগরীর সরকারি ৭ কলেজের জন্য প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সংক্রান্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মজিবর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা হবে ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও হাইব্রিড ধরনের, যেখানে ৪০ শতাংশ অনলাইন, ৬০ শতাংশ অফলাইন (সশরীরে) ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। সব ধরনের পরীক্ষা সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থী প্রথম চারটি সেমিস্টারে নন-মেজর কোর্স অধ্যয়ন করবে। পরবর্তী চার সেমিস্টারে ডিসিপ্লিন অনুযায়ী মেজর কোর্স অধ্যয়ন করবে। তবে পঞ্চম সেমিস্টারে শর্তপূরণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ইচ্ছানুযায়ী ডিসিপ্লিন পরিবর্তন করতে পারবে। তবে ক্যাম্পাস পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।
কার্যক্রম হবে চারটি স্কুল ভিত্তিক
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। এক বা একাধিক কলেজে স্কুলভিত্তিক ক্লাস হবে। সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস। স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ, স্কুল অব বিজনেসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ, স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের জন্য কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হয়েছে।
সবার জন্য সুবিধাজনক স্থানে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়। কলেজগুলোর বিদ্যমান উচ্চমাধ্যমিক অক্ষুণ্ণ থাকবে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কলেজগুলোতে থাকবেন। তবে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
এ বছরের মধ্যেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধ্যাদেশ জারি হবে। তবে এবারের ভর্তি কার্যক্রম বিদ্যমান নিয়মেই হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও যা থাকবে
একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে মজিবর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে একাডেমিক কাউন্সিল, সিনেট ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রক্টর থাকবেন। এছাড়া প্রতিটি কলেজে একজন পুরুষ ও একজন নারী ডেপুটি প্রক্টর থাকবেন। অর্থাৎ ৭ কলেজে সর্বমোট ১৪ জন ডেপুটি প্রক্টর থাকবেন।
সাত কলেজের পাঁচটিতে আগের মতো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চালু থাকবে বলে ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান। স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা টাইম, স্পেস ও রিসোর্স শেয়ারিং পদ্ধতিতে একই ক্যাম্পাস ব্যবহার করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। প্রতি ডিসিপ্লিনে যৌক্তিকভাবে ছাত্রসংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষেই ল্যাপটপ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সব প্রশাসনিক কার্যক্রম (ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, আবেদন ইত্যাদি) আইটি বেসড/ডিজিটাল সিস্টেমে সম্পাদিত হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা যেকোনো ধরণের অনুসন্ধান আইটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। কলেজগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগকর্তাদের বণ্টন করা হবে।
বাজেট গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। প্রতিটি কলেজে আধুনিক মানসম্পন্ন লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহন ব্যবস্থা থাকবে।
বিভিন্ন পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা আগের বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করবেন। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া, রেজাল্ট দ্রুত প্রকাশ করা ও সেশনজট কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব।
সাত কলেজের বর্তমান শিক্ষকদের কি হবে?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান বলেন, ‘কলেজের যে মৌলিক বৈশিষ্ট্য, সেখানে আমরা কোনো পরিবর্তন আনছি না। কলেজ কলেজের জায়গায়ই থাকবে। কলেজের শিক্ষকরা কলেজেই থাকবেন। বিদ্যমান কাঠামোয় কলেজের শিক্ষকরাই পাঠদান করবেন। যখন বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো কলেজের কাঠামোর সঙ্গে একীভূত থাকবে না। তখন নিয়োগ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে যোগ্যতা বলে নিয়োগ দেওয়া হয় সেই অনুযায়ী। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসতে চান, যারা যোগ্য আছেন তারা সাধারণ যে প্রক্রিয়া আছে, সে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন।’
ঢাকা মহানগরীর ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজ দেশের সব সরকারি ডিগ্রি কলেজের সঙ্গে ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি পায়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক নানা জটিল সংকটের সৃষ্টি হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিদ্যমান সংকট নিরসনে ২০১৭ সালে সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির পর সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে একটি নতুন স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে কলেজগুলোকে পরিচালনার দাবি জানায়।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরপরই গত বছরের ২৪ অক্টোবর ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনা ও সুপারের সংক্রান্ত কমিটি’ গঠন করা হয়। উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রস্তাব সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।