জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ২২ তরুণ নাগরিকের উদ্বেগ, নির্বাচনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৬ এএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিতে আন্দোলনের চেতনা থেকে বিচ্যুতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া এবং জাতীয় ঐক্যের অভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ২২ জন তরুণ নাগরিক। ২ আগস্ট (শনিবার) পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদাসীনতা পরিহার করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বিবৃতিতে চারটি সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়: “আমরা তরুণ নাগরিক সমাজ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সহস্র প্রাণের বিনিময়ে, হাজার হাজার আহত যোদ্ধা এবং লক্ষ ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে অর্জিত ৫ আগস্টের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর মূল চেতনা আজ বিচ্যুতির পথে। এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান মতাদর্শ, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে মানুষকে একত্রিত করেছিল। জন্ম নিয়েছিল একটি নতুন সমাজ গঠনের প্রত্যয়—যেখানে থাকবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং বৈষম্যহীনতা।”
তারা অভিযোগ করেন, এক বছরের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার এবং ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে গণঅভ্যুত্থানের ব্যানারটি সেই চেতনা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। একসময় অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যেটি শিক্ষার্থীদের ঐক্য গড়েছিল, তা এখন একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ, ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যানার ব্যবহারের অভিযোগ এবং “সমন্বয়ক” পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রভাব খাটানোর অপচেষ্টা ব্যানারটিকে বিতর্কিত করেছে।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং তথাকথিত ‘মব জাস্টিস’ মোকাবিলায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে ১৭৪ জন মানুষ মব সহিংসতায় নিহত হয়েছেন (সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার, ২৫ জুন ২০২৫) ।
একই সঙ্গে মাজার ভাঙা এবং নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্য তৎপরতা নিয়ে সরকারের নীরবতা সমাজে দক্ষিণপন্থী উগ্রবাদকে উৎসাহিত করছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি—কমপক্ষে ২৮৪ জন শ্রমজীবী শহীদ হয়েছেন (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ১৯ জুলাই ২০২৫) । অথচ বর্তমান সংস্কার সংলাপে নারী প্রতিনিধিত্ব ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে কোনো আলোচনা না হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক। অথচ এই দুই গোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্দোলনে ছিল অনস্বীকার্য।
দাবিসমূহ
সার্বিক পরিস্থিতিতে তরুণ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘জুলাই স্পিরিট’ ধারণ করে নিম্নলিখিত পাঁচটি দাবি পূরণের আহ্বান জানানো হচ্ছে:
১. অন্তর্বর্তী সরকারের উদাসীনতা পরিহার করে দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে নিরাপদ, স্বাধীন এবং সহজ ভোটদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীগণ:
১। নূর আলম – লেখক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
২। রুবায়াত মান্নান রাফি – নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ডায়ালগ
৩। রেং ইয়ং ম্রো – আদিবাসী ছাত্রনেতা ও অধিকার কর্মী
৪। মিনহাজ আমান – গণমাধ্যম গবেষক
৫। মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী – কলাম লেখক ও গবেষক
৬। শাহাদাৎ স্বাধীন – সাংবাদিক ও অ্যাকাডেমিক
৭। রোমান উদ্দিন – উন্নয়নকর্মী
৮। খন্দকার তাহমিদ রেজওয়ান – ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা গবেষক
৯। সাদিক মাহবুব ইসলাম – সাংবাদিক ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার
১০। লিটন বড়ুয়া – রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞানী
১১। আব্দুর রশিদ জিতু – জুলাই সংগঠক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১২। রুদ্র মোহাম্মদ সাফিউল্লাহ – জুলাই সংগঠক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৩। রায়ানুজ্জামান চৌধুরী আকিব – জুলাই সংগঠক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৪। সাকলাইন রিজভী – সাংবাদিক
১৫। ফাহমিদা ফাইজা – জুলাই সংগঠক
১৬। সাজিদ হাসান চৌধুরী – তরুণ অ্যাকাডেমিক, সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি
১৭। আলকামা আজাদ – সাংবাদিক ও গবেষক
১৮। মো. নাফিস জুবায়ের চৌধুরী – চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট
১৯। মো. শিফাত উল্লাহ – প্রকৌশলী
২০। মো. আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া – স্নাতকোত্তর গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২১। জুনায়েদ মুফরাদ মৌসুম – মানবাধিকার কর্মী
২২। আবরার ফাহিম – সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট-