গণভাবনার জনমত জরিপ
চাঁপাইনবাবগন্জ-১ আসনে জামায়াতের থেকে বড় ব্যবধানে বিএনপি এগিয়ে

জরিপের তথ্য সংগ্রহ করছেন গণভাবনার জরীপকারী
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে পরিচালিত একটি জনমত জরিপের তথ্য অনুযায়ী বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। এই আসনের শতকরা ৫৩ ভাগেরও বেশি মনে করেন বিএনপি বিজয়ী হবেন। ২২ ভাগ মনে করেন জামাত ও ৩.৫ ভাগ মনে করেন এনসিপি বিজয়ী হবেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে শাহজাহান মিয়া জরিপে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের প্রার্থী, তিনি সকল ইউনিয়নেই বিএনপির অন্যান্য প্রার্থী হতে যারা ইচ্ছুক ও জামাতের সম্ভাব্য প্রার্থীর চাইতে বড় ব্যবধানে জনপ্রিয়তার হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন।
এ বছরের জুন মাসে চাঁপাইনবাবগন্জ-১ আসনের ২,১৩৯ জন বৈধ ভোটার সরাসরি মাঠপর্যায়ে পরিচালিত এই জরিপে অংশ নেন। ৫৮% পুরুষ ও ৪২% নারী জরিপটিতে অংশ নেন। সর্বাধিক সংখ্যক বয়স শ্রেণি ছিলো ২৬–৩৫ বছর। জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্যে ২৩% এর বয়স ছিলো ১৮ থেকে ২৫ বছর। এই জরিপটি পরিচালনা করেছে Gono Bhabna নামের একটি অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানি ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সংগঠনটির ওয়েবসাইটে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয় (https://gono-bhabna.org/chapai)
বিএনপি ও জামাতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই
জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বিএনপি সমর্থক হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করেছেন, তাদের মধ্যে বিএনপি প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের জনপ্রিয়তা যাচাই করা হয়। শতকরা ৯০ ভাগ শাহজাহান মিয়া, ২ ভাগ আশরাফুল, ২ ভাগ শাহীন শওকত, ১ ভাগ সাদিকুল ও ১ ভাগেরও কম সমর্থন পান বেলাল ই বাকি।
সব দলের সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে পছন্দের প্রার্থী হিসেবেও এগিয়ে রয়েছেন শাহজাহান মিয়া (৩৪.৯%), তাঁর পরেই রয়েছেন জামায়াতের কেরামত (১৭%)। তবে শতকরা ৪৪ ভাগ মানুষ তাদের সিদ্ধান্ত জানান নি।
জামাতের সমর্থকদের মধ্যে চালানো জরিপে ৪১.৯ ভাগ কেরামতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, তবে ৫৩.৬% তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে চাননি।
জরিপকারী সংস্থাটি ১৫টি ইউনিয়নে ও ১ টি পৌরসভায় এই জরিপ পরিচালনা করে। এর প্রতিটিতেই বিএনপি জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছে।
দল হিসেবে নারী ভোটারদের কাছে জামায়াত জনপ্রিয়। তবে প্রার্থী হিসেবে শাহজাহান মিয়া জামায়াত প্রার্থী কেরামতের চেয়ে নারী ভোটারদের বেশি পছন্দের।
প্রায় ৩৮% ভোটার মনে করেন আওয়ামী লীগের ভোটাররা বিএনপি/শাহজাহান মিয়ার দিকে ঝুঁকতে পারেন।
ভোটারদের প্রধান চাহিদা অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ।
৭২% ভোটার জানিয়েছেন, তারা কোনো সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের মতামত অনুসরণ করেন না।
জরিপ পদ্ধতি
গণভাবনা’র গবেষণা টীমের সদস্য ডঃ সোহেল রানা (বন বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানী) এবং রায়হানুল ইসলাম (জাতিসংঘ, বন, জার্মানী) বলেন, "এই গবেষণায় আমরা একাডেমিকভাবে মানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। অনলাইন জরীপ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিহার করা হয়েছে, কারণ গ্রামভিত্তিক সংসদীয় আসনগুলোতে অনেক ভোটারের অনলাইন অ্যাকসেস নেই। আমাদের মূলত দুইটি বিষয়ে গুরুত্ব ছিল—১) পুরো আসনের প্রতিনিধিত্ব (representativeness) নিশ্চিত করে এমন একটি নির্ভরযোগ্য বেইজলাইন তৈরি করা, এবং ২) তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে পক্ষপাত (biasness) কমানো।"
এই দুই গবেষক জানান, "মোটাদাগে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন বাংলাদেশে ডেটা-ভিত্তিক রাজনীতি প্রমোট করা। তথ্যের প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত করতে আমরা এই আসনের সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে ২,০০০ এরও বেশি ভোটারের সঙ্গে জরিপ পরিচালনা করেছি। স্তরভিত্তিক দৈবচয়ন (stratified random sampling) পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্রাম/ওয়ার্ড এবং সেখানকার উত্তরদাতাদের দৈবভাবে নির্বাচন করা হয়েছে।"
পক্ষপাতিত্ব নিয়ন্ত্রণে তাঁরা চারস্তরের কৌশল গ্রহণ করেন বলে জানান-
i) Standardized প্রশ্নপত্র প্রণয়নঃ সকল প্রধান রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করে নিরপেক্ষ ও প্ররোচনাহীন ভাষায় প্রশ্ন প্রণয়ণ করা হয়েছে
ii) একাডেমিক মান বজায় রেখে তথ্য সংগ্রহঃ এনিউমারেটরদেরকে একাডেমিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে জরীপ পরিচালনা করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ঘনিষ্ঠভাবে তা তদারকি করা হয়েছে
iii) স্বতন্ত্র যাচাইঃ একজন স্বতন্ত্র গবেষক ইউনিয়নগুলোতে কোয়ালিট্যাটিভ পর্যবেক্ষণ (qualitative observation) পরিচালনা করেছেন, এবং তাঁর পর্যবেক্ষণ মেমোগুলো পরবর্তীতে জরিপের ফলাফল যাচাইয়ে ব্যবহৃত হয়েছে
iv) নিরপেক্ষ বিশ্লেষণঃ ব্যাখ্যাগত পক্ষপাত (Interpretive biasness) এর ঝুঁকি কমানোর জন্য চাঁপাইনবাবগন্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সাথে কোনো ব্যক্তিগত বা পেশাগত সম্পর্ক নেই এমন সদস্যদের দ্বারা এই জরীপের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গণভাবনা বাংলাদেশে রাজনীতিকদের জন্য তথ্য-চালিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ উন্মুক্ত করার একটি মিশন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বলে তিনি জানান। পর্যায়ক্রমে গণভাবনা এ ধরণের সমীক্ষা আরো সংসদীয় আসনে চালাতে আগ্রহী বলে জানান ড. ফয়সাল কবীর।