সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে, গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আরও এক মামলায়

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হককে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে তাঁকে হাজতখানায় নেওয়া হয়। ছবি: সংগ্রহীত
রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় ‘বেআইনি ও বিদ্বেষপ্রসূত রায়’ দেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে সাত দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশও হয়েছে।
বুধবার (২৮ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্ল্যাহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামছুদ্দোহা সুমন উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, পুলিশ এ মামলায় দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল। শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এই মামলার বাদী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। তিনি গত বছরের ২৭ আগস্ট শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বেআইনি রায় দেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রায় জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়। মামলার মূল অভিযোগে বলা হয়, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আইনের গঠনতন্ত্রবিরোধী ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং এতে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈন উদ্দিন কাদিরের আদালত ফতুল্লা থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর অনুমতি দেন। শুনানিতে খায়রুল হক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন। বাদী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল বারী ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে খায়রুল হক যে রায় দিয়েছেন, তা ছিল ‘রাষ্ট্রবিরোধী ও জাল’। সেই রায়ের মধ্য দিয়ে বিচারকের পদ ব্যবহার করে দেশকে সাংবিধানিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। আদালতে তিনি বলেন, খায়রুল হকের বিচার হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অপব্যবহার করতে না পারে।
ফতুল্লা থানার মামলাটি দায়ের হয় ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট। এতে একমাত্র আসামি করা হয় খায়রুল হককে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জনমতের পরিপন্থী রায় দিয়েছেন, যার ফলে গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
২৬ আগস্ট একই ধরনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয় নজরুল ইসলাম মোল্লা নামে একজনের দ্বারা।
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর তাঁকে আরও এক মামলায়, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সেদিন সন্ধ্যায় তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ বি এম খায়রুল হক ছিলেন বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি। তার দেওয়া রায়, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অবসান সংক্রান্ত রায়, দেশজুড়ে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সম্প্রতি সেই রায়কে কেন্দ্র করেই তাঁকে একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে।