Logo
Logo
×

সংবাদ

সাংবা‌দিক আ‌রিফ‌কে তু‌লে নি‌য়ে নির্যাতন

ডি‌সি সুলতানা ও তিন ম্যাজিস্ট্রেটের বিরু‌দ্ধে চার্জশিট দা‌খিল

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম

ডি‌সি সুলতানা ও তিন ম্যাজিস্ট্রেটের বিরু‌দ্ধে চার্জশিট দা‌খিল

আজ‌কের প‌ত্রিকা ও বাংলা ট্রিবিউ‌ন প‌ত্রিকার কু‌ড়িগ্রা‌ম প্রতি‌নি‌ধি মো. আ‌রিফুল ইসলাম রিগানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের না‌মে রা‌তের আঁধা‌রে বা‌ড়ি থে‌কে তু‌লে নি‌য়ে নির্যাতন করার অভি‌যো‌গে করা মামলায় কু‌ড়িগ্রা‌মের সা‌বেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন ও তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অ‌ভিযুক্ত ক‌রে আদাল‌তে চার্জশিট জমা দি‌য়েছে পু‌লিশ ব্যু‌রো অব ইন‌ভে‌স্টি‌গেশন (‌পি‌বিআই)। 

মঙ্গলবার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ও পি‌বিআই রংপু‌রের প‌রিদর্শক রায়হানুল রাজ দুলাল কু‌ড়িগ্রাম চিফ জু‌ডি‌শিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদাল‌তে চার্জশিট দা‌খিল ক‌রেন। আইও রায়হানুল রাজ দুলাল এবং কোর্ট ইন্স‌পেক্টর নজরুল ইসলাম জু‌য়েল এ তথ্য নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন।

আদালত সূত্র জানায়, চার্জশি‌টে সা‌বেক ডি‌সি সুলতানা পারভীন, সা‌বেক আর‌ডি‌সি না‌জিম উ‌দ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এসএম রাহাতুল ইসলাম‌কে অ‌ভিযুক্ত করা হ‌য়ে‌ছে। দন্ড‌বি‌ধির ৯ টি ধারায় তা‌দের বিরু‌দ্ধে অ‌ভি‌যোগ আনা হ‌য়ে‌ছে। পরবর্তী ধার্য তা‌রি‌খে সং‌শ্লিষ্ট আদাল‌তে চার্জশিট উপস্থাপন করা হ‌বে।

চার্জশিট দা‌খি‌লের খব‌রে বাদী ও ভুক্ত‌ভোগী সাংবা‌দিক আ‌রিফুল ইসলাম রিগান ব‌লেন, ‘ দীর্ঘ পাঁচ বছ‌রেরও বে‌শি সময় পর চার্জশিট জমা হ‌লো। আসা‌মিরা সবাই প্রভাবশালী। বিভাগীয় মামলায় তা‌দের সক‌লের বিরু‌দ্ধে অ‌ভি‌যোগ প্রমাণ হ‌লেও তারা চাক‌রি‌তে বহাল ছি‌লেন।  তারা‌ বি‌ভিন্ন সময় মামলার তদন্ত কা‌জে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা ক‌রে‌ছেন। এরপরও চার্জশিট দা‌খিল করায় তদন্ত সংস্থা‌ পি‌বিআই‌কে ধন্যবাদ। আশা ক‌রি আদাল‌তে ন‌্যায় বিচার পা‌বো।’ 

আ‌রিফ বলেন, জদা‌রি মামলার এজাহারভুক্ত আসা‌মি হ‌লেও তা‌দের‌ গ্রেফতার করা হয়‌নি। দীর্ঘ পাঁচ বছ‌রেও আসা‌মিরা আদাল‌তে আত্মসমর্পণ ক‌রেনি। দে‌শের সাধারণ নাগ‌রিক হ‌লে আইন এসন আচরণ কর‌তে পার‌তো? এ ধর‌ণের পক্ষপাতিত্ব ‌দে‌শের সং‌বিধান ও ন‌্যায়‌বিচা‌রের প‌রিপ‌ন্থি।

সাংবাদিক রিগা‌নের প‌ক্ষে রীটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বিগত ২০২০ সা‌লের ৩ মার্চ মাননীয় হাইকোর্টের নির্দেশে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনার তদন্তপূর্বক কুড়িগ্রামের তৎকালীন ডিসি মোছা. সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দীন এবং দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর পিবিআই তাদের তদন্ত শেষে এজাহার নামীয় চার আসামির বিরুদ্ধে অপরাধের সত্যতা পেয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। বিলম্ব হ‌লেও এটা একটা দৃষ্টান্ত।’

এই আইনজীবী আরও ব‌লেন, ‘উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যাচ্ছে, আসামিরা এতদিনেও আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন গ্রহণ করেননি। তারা পলাতক থাকলেও নিয়মিতভাবে সরকারি চাকরিতে বহাল রয়েছেন, যা আইন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। বিভাগীয় তদন্তেও তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, যা তাদের প্রশাসনিকভাবে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে।

এতদসত্ত্বেও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া শুধুমাত্র বিচারব্যবস্থার প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং এটি প্রশাসনের অভ্যন্তরে প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি  উদাহরণ। আমি আইনজীবী হিসেবে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রত্যাশা করি’ ন‌্যায় বিচা‌রের স্বা‌র্থে আসা‌মি‌দের শা‌স্তির দা‌বি জা‌নি‌য়ে ব‌লেন আইনজীবী ইশরাত।

কোর্ট ইন্স‌পেক্টর নজরুল ইসলাম জু‌য়েল ব‌লেন, আমরা চার্জশিট পে‌য়ে‌ছি। পরবর্তী ধার্য তা‌রি‌খে আদালতে ন‌থি উপস্থাপন করা হ‌বে।’

প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নামে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে (১৪ মার্চ) সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে জেলা শহরের ধরলা ব্রিজের পূর্ব পাড়ে নেওয়া হয়। পরে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ওই সময়ের আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম এবং মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাসহ জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা। আরিফের বাড়িতে কোনও তল্লাশি না চালালেও তার কাছ থেকে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে মোবাইল কোর্টের নামে সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মধ্যরাতে বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে সাজা দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

গণমাধ্যমে এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় পরদিন ঘটনাস্থলে যান রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।

১৫ মার্চ পরিবারের আবেদন ছাড়াই আরিফের জামিনের ব্যবস্থা করে জেলা প্রশাসন। কারামুক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন সাংবাদিক আরিফ। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সে বছর ৩১ মার্চ মামলা রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আরিফকে দেওয়া সাজা স্থগিত করা হয়।

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন