Logo
Logo
×

সংবাদ

আল জাজিরার অনুসন্ধান

ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন রাতে ঘুম হতো না হাসিনার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৪১ পিএম

ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন রাতে ঘুম হতো না হাসিনার

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর আগে জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন এক সময় রূপ নেয় হাসিনার পদত্যাগের আন্দোলনে। ওই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার দিনগুলো কেমন কাটছিল তা উঠে এসেছে আলজাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। 

প্রায় ৫০ মিনিটের এই প্রতিবেদনে তার দল নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে তার ফোনালাপে তিনি জানান, দুদিন ধরে রাতে ঘুমাতে পারছেন না তিনি। 

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও হলত্যাগের ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনের খোঁজ নিতে ইনানকে ফোন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এ সময় ইনান বলেন, ক্যাম্পাস প্রায় খালি হয়ে গেছে। ছেলেদের হলগুলো থেকে সব ছাত্র বের হয়ে গেছে। আমাদের সিনিয়র অনেক নেতারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাই বারবার আপনাকে কল করেছিলাম। আপনি কিছু মনে করবেন না। 

তখন ওই পাশ থেকে হাসিনা বলেন, আমি কী মনে করবো। সেদিন সারারাতই জাগা, কালকেও তো। দক্ষিণে আমি বলে দিয়েছি, যখন যা দরকার তাই করতে। তারা ঘাবড়ায়া যায়। 

আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া ফোনালাপগুলোর অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে। এতে শেখ হাসিনার ওই অডিও যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা নয়, সেটি নিশ্চিত হয়েছে আই-ইউনিট।

গত বছরের ১৮ জুলাই জাতীয় টেলিযোগাযোগ নজরদারি কেন্দ্র (এনটিএমসি) শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপ রেকর্ড করে। এই কল রেকর্ডে শেখ হাসিনা তার এক সহযোগীকে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্যে আদেশ দিয়েছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে গুলি চালাবে। এটা নির্দেশ দিয়েছি। এ পর্যন্ত আমি তাদের থামিয়ে রেখেছিলাম... আমি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ওই ফোনালাপে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টার ব্যবহারের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেখানেই জমায়েত দেখা যাবে, ওপর থেকে, এখন তো ওপর থেকেই হচ্ছে—কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। কিছু বিক্ষোভকারী সরে গেছে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ওই সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর আকাশ থেকে গুলি চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করলেও রাজধানীর পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাবির শরীফ আল জাজিরার আই ইউনিটকে বলেন, হেলিকপ্টার থেকে আমাদের হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীদের শরীরে গুলির অস্বাভাবিক ক্ষত দেখা গেছে। শাবির শরীফ বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলি বিক্ষোভকারীদের কাঁধে অথবা বুকে ঢুকে যায় এবং সেগুলো শরীরেই থেকে গেছে। সেই সময় আমরা এ ধরনের অনেক রোগী পেয়েছিলাম। এক্স-রে করে আমরা হতবাক হয়েছি যে, শিক্ষার্থীদের শরীরে অনেক গুলি ছিল।

আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে এসব ফোনালাপ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। শেখ হাসিনা, তার কয়েকজন মন্ত্রী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা ও তার দুই সহযোগী কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আগামী আগস্টে তাদের বিচার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

আন্দোলনের সময় এসব ফোনালাপ রেকর্ড করেছে শেখ হাসিনার নজরদারি সংস্থা এনটিএমসি। এই সংস্থাটি এর আগেও কেবল বিরোধী নেতাদের নয়, বরং হাসিনার রাজনৈতিক মিত্রদের ওপরও নজরদারি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন