Logo
Logo
×

সংবাদ

সংশোধন হচ্ছে তথ্য অধিকার আইন

তথ্য গোপন করলে পাঁচগুণ জরিমানা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম

তথ্য গোপন করলে পাঁচগুণ জরিমানা

অন্তর্বর্তী সরকার ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, সরকারি তথ্য গোপন (withhold) করলে বা তথ্যপ্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করলে আগের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি জরিমানার বিধান থাকছে। পাশাপাশি, আইনটির চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত আইনে কেউ সরকারি তথ্য গোপন করলে প্রতিদিন ২৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, যেখানে আগে এটি ছিল প্রতিদিন ৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, জরিমানার পরিমাণ বাড়ছে পাঁচ গুণ।

প্রস্তাবিত খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কেউ যদি দুর্নীতি বা অপরাধ আড়াল করার উদ্দেশ্যে তথ্য গোপন করে, তাহলে জরিমানা আরোপ বাধ্যতামূলক হবে।

চারটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আইনটির ৫, ৬, ৭ ও ২৭ ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, নাগরিকরা যাতে সহজে ও অবাধে চাহিদামতো সরকারি সেবা-সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে, সে লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন করা যেতে পারে।

ধারা ৫: তথ্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক ও ডিজিটাল রূপান্তর

সংশোধিত ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সরকারি সংস্থাকে তাদের সব তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস ও সূচি প্রস্তুত করতে হবে এবং তা কম্পিউটার বা অন্যান্য উপযুক্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে। এসব তথ্য একটি জাতীয় ই-নেটওয়ার্কের (e-network) মাধ্যমে যুক্ত করে নাগরিকদের জন্য সহজে প্রবেশযোগ্য করে তুলতে হবে।

‘রেকর্ড’ বলতে বোঝাবে ফাইল, পাণ্ডুলিপি, মাইক্রো ফিল্ম, চিত্র, অডিও বা ডিজিটাল তথ্যের যেকোনো রূপ।

ধারা ৬: তথ্য প্রকাশ ও প্রচার বাধ্যতামূলক

প্রত্যেক সরকারি কর্তৃপক্ষকে গৃহীত, চলমান ও প্রস্তাবিত কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে—প্রস্তাবিত বাজেট, প্রকৃত আয় ও ব্যয়, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, দরপত্রের ফলাফল, চুক্তি, নিরীক্ষা (অডিট) প্রতিবেদন, প্রকল্প ব্যয় এবং সরকারি অর্থ ব্যবহারের বিবরণ।

এসব তথ্য নিয়মিতভাবে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা থাকবে, যাতে নাগরিকরা সহজেই তা জানতে পারেন।

ধারা ৭: জনস্বার্থে তথ্য গোপনের ব্যতিক্রম

বর্তমানে এই ধারায় কিছু তথ্য গোপনের সুযোগ থাকলেও, সংশোধনীতে জনস্বার্থ বিবেচনায় এই সীমা আরও নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। দুটি উপধারা যোগ করে বলা হয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে এবং কীভাবে তথ্য গোপন করা যাবে, তা স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।

ধারা ২৭: জরিমানা বাড়ছে পাঁচগুণ

বর্তমানে কেউ সরকারি তথ্য গোপন করলে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশোধিত আইনে তা বাড়িয়ে প্রতিদিন ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তাছাড়া, যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে তথ্য গোপনের মাধ্যমে দুর্নীতি বা অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাহলে জরিমানা বাধ্যতামূলক হবে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহেরা ববি বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আইনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। এখন সংশোধিত খসড়া নিয়ে মতামত গ্রহণ চলছে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত জনমত গ্রহণ চলবে। এরপর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশোধিত আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন