Logo
Logo
×

সংবাদ

সোহরাওয়ার্দীতে বিপুল জনসমাগম, ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন কম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ০২:০৪ পিএম

সোহরাওয়ার্দীতে বিপুল জনসমাগম, ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন কম

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার রাজপথে সাধারণ যানবাহনের চাপ কমে গেছে। তবে সমাবেশস্থল ঘিরে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি এবং নেতাকর্মীদের মিছিলের কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে যানজট ও ধীরগতির ট্র্যাফিক পরিস্থিতি।

দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা থেকেই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত ও ইসলামি সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সমাবেশের প্রথম পর্যায় শুরু হয়। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই সোহরাওয়ার্দীর আশপাশে জড়ো হতে শুরু করেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। আজ সকালে মিছিলের ঢল নামে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, ‘সমাবেশ সফল হোক’ স্লোগানে মুখর থাকে শাহবাগ, পল্টন, মৎস্যভবন, কারওয়ান বাজারের পথঘাট।

শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় আজ রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহন অনেক কম দেখা গেছে। তার বদলে ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিক্য চোখে পড়ে সমাবেশমুখী রাস্তাগুলোতে। শাহবাগ থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত সড়কে বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন প্রায় অচল হয়ে পড়ে মিছিলের কারণে।

মৎস্যভবন মোড়ে দায়িত্ব পালনরত এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, নেতাকর্মীদের মিছিলের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মিছিলের কারণে যেসব রিকশা জমাট বাঁধতে পারছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছেন তারা।

ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, বিভিন্ন পয়েন্টে বাস ও অন্যান্য গাড়ি আটকানো হয়েছে যাতে ঢাকার ভিতরের ট্র্যাফিক সচল থাকে। পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠসহ বিভিন্ন প্রান্তে বাইরে থেকে আগত বাসগুলো পার্ক করানো হয়েছে। যান চলাচল ব্যাহত না হয় সেজন্য নির্দিষ্ট এলাকায় ডাইভারশনও দেওয়া হয়েছে।

তেজগাঁও, বাংলামটর, মগবাজার, চাঁনখারপুল, পল্টনসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দীর্ঘ যানজটের খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় সকাল থেকে মিছিল ও সমাবেশমুখী মানুষের ভিড়ে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় প্রবেশের মুখ যাত্রাবাড়ীতে সকাল ১০টা থেকেই গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। চাঁদপুর, কুমিল্লা, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বাস ও মাইক্রোবাসযোগে হাজার হাজার কর্মী ঢাকায় পৌঁছান। চিটাগং রোড, শনির আখড়া হয়ে প্রবেশের পথে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে জামায়াতের কর্মী ইব্রাহিম জানান, তারা প্রায় ৬০টি বাসে করে রওনা দেন। আরেকজন জানান, নাস্তা গাড়িতেই সেরে তারা ঢাকার দিকে রওনা হন যাতে দেরি না হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সমাবেশস্থল ও আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে—পোশাক ও সাদা পোশাকে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

ডিএমপির মিডিয়া উইংয়ের উপকমিশনার বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্র্যাফিক বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

সমাবেশের কারণে সম্ভাব্য জনদুর্ভোগের জন্য দলটি আগেই নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। দলীয় ফেসবুক পেজ থেকে এক পোস্টে জানানো হয়, "সমাবেশ উপলক্ষে সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।"

দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, “লাখো মানুষের ঢাকায় আগমন এবং সড়ক ব্যবহার হবে, এতে কিছু যানজট ও দুর্ভোগ হতেই পারে—তবে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সমাবেশে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের জন্য জামায়াত নিয়োগ করেছে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক। পাশাপাশি মেডিকেল বুথ, নিরাপত্তা টিম ও পার্কিং ব্যবস্থাও ছিল সমন্বিত। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোহরাওয়ার্দীতে এই প্রথম এতো বড় আয়োজন, যেখানে নির্বাচনী সংস্কার, অংশগ্রহণমূলক ভোট এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে দাবি তুলে ধরা হচ্ছে।

এই সমাবেশ কেবল একটি রাজনৈতিক জমায়েত নয়; বরং আসন্ন নির্বাচন এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে জামায়াতে ইসলামীর এই আয়োজন ঢাকায় রাজনৈতিক সমাবেশের নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন