Logo
Logo
×

সংবাদ

ভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে নারীর ওপর হামলার ছক, জানাল র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

ভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে নারীর ওপর হামলার ছক, জানাল র‍্যাব

কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনার মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে ‘শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে’ তার ছোট ভাই শাহ পরাণই ওই রাতে ‘জনতা জড়ো করার রূপরেখা’ তৈরি করেছিলেন— এমন তথ্য দিয়েছে র‍্যাব।

শাহ পরাণকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে যে, তার নির্দেশ অনুযায়ী সহযোগীরা ওই নারীর ঘরে ঢুকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং পুরো দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মুরাদনগরের বুড়িচং এলাকা থেকে শাহ পরাণকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। সংস্থাটির মতে, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার মূল রূপকার, উসকানিদাতা ও কৌশল নির্ধারক ছিল এই শাহ পরাণ।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

প্রবাসে থাকা এক নারীর ওপর নির্যাতন ও সেই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াকে ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক নিন্দা চলছে এক সপ্তাহ ধরে। ভুক্তভোগী নিজেই ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ফজর আলীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত শাহ পরাণসহ মোট ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, “যারা ঘটনার সময় ভিডিও করেছে, তা ছড়িয়ে দিয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়লেও মূল হোতা শাহ পরাণ ছিল এখনো অধরা।”

তিনি আরও জানান, শাহ পরাণ এবং ফজর আলী— দুই ভাইই দীর্ঘদিন ধরে ওই নারীকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করছিল। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সেই বিরোধ মেটাতে মাস দুয়েক আগে স্থানীয়ভাবে এক সালিশ বসে, যেখানে শাহ পরাণ অপমানিত এবং মারধরের শিকার হন নিজের ভাই ফজরের হাতে। সেই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তাই তাকে ওই পরিকল্পনায় ঠেলে দেয়।

ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে ভুক্তভোগী তার বাবার বাড়িতে আসেন। এ সময় ফজর আলী, যিনি ওই নারীর মাকে সুদে ৫০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন, সময় সময় টাকা আদায়ের অজুহাতে তাদের বাড়িতে যেতেন। ঘটনার দিনও একই উদ্দেশ্যে তিনি যান।

র‍্যাব জানায়, শাহ পরাণ এই খবর পেয়ে তার অনুসারীদের বলে দেন, “এই সময়েই সে (ফজর আলী) যাবে, তোমরা প্রস্তুত থাকো।”

নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাতের বেলা ফজর আলী ঘরে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পর শাহ পরাণের লোকজন ঘরে ঢুকে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়।

এই পুরো ঘটনার পেছনে মূলত দুই ভাইয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্বই কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “দুজনই ওই নারীকে উত্ত্যক্ত করত। সেই থেকেই শুরু দ্বন্দ্ব। সালিশে শাহ পরাণ মার খায়। তারপর সে ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয় জনতার সহায়তায়। ফজর আলী যেহেতু টাকা পেত, তাই মাঝেমধ্যে বাসায় যেত। সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে শাহ পরাণ ঘটনাটি সাজায়।”

তিনি আরও জানান, “ঘটনার আগে ইমোতে একটি বার্তা পাঠায় শাহ পরাণ। সেই বার্তায় লেখা ছিল, ‘আজ রাতে যাবে, তোমরা কি কিছু করতে চাও?’ সেই বার্তাটি আমাদের হাতে রয়েছে।”

যাকে বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল, তাকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি, তাই তার পরিচয় প্রকাশ করেনি র‍্যাব।

শাহ পরাণের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে র‍্যাব জানায়, “অপরাধের বিচার অপরাধ হিসেবে হয়, রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচ্য নয়। সে একজন সিএনজি চালক, কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।”

ভিডিওটি কে ধারণ করেছিল এবং ছড়িয়ে দিয়েছিল, তা জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি, এখনো কয়েকজন গ্রেপ্তার বাকি।”

এর আগে গত রোববার কুমিল্লা জেলা পুলিশ জানায়, ২৬ জুন রাতে মুরাদনগরের একটি গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়। ঘটনার সময় ওই ব্যক্তিকে পেটানো হয় এবং পরে সে পালিয়ে যায়। একই সময় কিছু ব্যক্তি ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইনি ব্যবস্থা নেয়।

ভুক্তভোগী জানান, তাদের পরিবারের সঙ্গে ফজর আলীর পরিচয় হয় টাকা ধার দেওয়ার সূত্র ধরে। সেই পরিচয়ের সুযোগ নিয়েই ফজর আলী বাড়িতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ফজর আলীকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন।

পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় আটক অন্য চারজন হলেন— সুমন, রমজান, মো. আরিফ ও মো. অনিক। তারা তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন