Logo
Logo
×

সংবাদ

ছাত্রলীগ নেতাকে আটকের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নামে পটিয়া থানা ভাঙচুরের অভিযোগ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

ছাত্রলীগ নেতাকে আটকের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নামে পটিয়া থানা ভাঙচুরের অভিযোগ

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটককে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মব সৃষ্টি করে পটিয়া থানায় আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের ওপরই বরঞ্চ পুলিশ আক্রমণ করেছে। 

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় পটিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি দীপঙ্কর দেকে (২৮) পটিয়া থানায় আটক করে নিয়ে আসে। আটককৃত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখাতে কাল বিলম্বের অজুহাত (লকআপে নেওয়ার পরও) তুলে উত্তেজিত হয়ে পটিয়া উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২০/২৫ জন সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে মিছিল নিয়ে থানার ভিতরে ঢুকে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে ও পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে  বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

পুলিশের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, তাদের ধস্তাধস্তিতে ৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা থানার গেটের সামনে অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দেয় ও রাতের বেলায় থানা ঘেরাও এবং ভাঙচুর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে । তাদের বাঁশি বাজিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হলে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ৫ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করে এবং থানায় রক্ষিত আলামতের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পুলিশ সুপারেনটেনডেন্ট সাইফুল ইসলাম বাংলা আউটলুককে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দুদিন আগেও যারা যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল তারাই বৈষম্যবিরোধী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সমর্থক পরিচয়ে মব সৃষ্টি করে পুলিশের ওপরে আক্রমণ চালিয়েছে।

পুলিশের সূত্র নিশ্চিত করেছে, পুলিশের ওপরে মব সৃষ্টিতে কাজ করেছে পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জমিরের "অস্ত্রধারী ক্যাডার" আশরাফুল ইসলাম তৌকির।

এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সিনথিয়া জাহীন আয়েশা আজ বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পটিয়া থানায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান ও বিচার দাবি করেন। 

তিনি গতকাল ১ জুলাই চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সামনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

তার মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণরত আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, ধাক্কাধাক্কি এবং অপমানজনক আচরণ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার শামিল।

তার দাবি ঘটনার সূত্রপাত ঘটে বরিশাল থেকে আগত একটি মামলার আসামি ও "প্রমাণিত সন্ত্রাসী" এক ছাত্রলীগ নেতাকে জনতার সহায়তায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পর যখন পুলিশ প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তারে অপারগতা জানায় এবং উল্টো আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়।

এতে পটিয়া থানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্তত ছয়জন আন্দোলনকর্মী আহত হন, যাদের মধ্যে কয়েকজন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা কোনোরূপ পূর্ব সতর্কতা বা পরিস্থিতি নিরীক্ষা না করেই অতর্কিতে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাকে অনৈতিক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্লাসিক উদাহরণ হিসেবে দেখছি। একটি গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন ও প্রতিবাদ করাটা নাগরিকের মৌলিক অধিকার, আর সেই অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হওয়াটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং নিন্দনীয়।

তারা দাবি করেন, 

১. পটিয়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তার কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

২. আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৩. আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রশাসনিকভাবে এই হামলার দায় সরকারকে নিতে হবে।

৪. ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্বচ্ছ পুলিশি আচরণবিধি নিশ্চিত করতে হবে এবং থানাগুলোতে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চায়, আমরা কোনো ধরনের পুলিশি নিপীড়ন, ছাত্রদমন বা রাষ্ট্রীয় পক্ষপাতদুষ্টতা মেনে নেব না। রাষ্ট্র যদি নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।আমরা দায়িত্বশীলভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব,  তবে প্রশাসনিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায়ও থাকব, মাঠেও থাকব, ইতিহাসের পাতাতেও থাকব।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন ফেসবুকে লিখেছেন, "পটিয়া থানার ওসিকে প্রকাশ্য ফাঁসি দেওয়া জায়েজ হয়ে গেছে। জুলাই এর মতো ওসি জায়েদ নূরকে মেরে রাস্তায় লাশ ঝুলায়ে রাখতে হবে। ওসি জায়েদের আওয়ামী রক্ত পবিত্র করার কোনো উপাদান এই বাংলাদেশে নাই। ৫ আগস্ট এর পর এদেরকে ঝুলানো যায় নাই দেখে এরা আজকে এই সাহস করতেসে!"

Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন