মামলা বাণিজ্য এবং ভুয়া মামলা থেকে পরিত্রাণ পেতে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে নতুন সংশোধন যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আজ রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই তথ্য জানান। 

এর আগে আজ সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আসিফ নজরুল বলেন, আজকের বৈঠকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি কার্যবিধির একটা সংশোধন হয়েছে। আমরা নিজেরাই খুব বিব্রত, আমরা এগুলো সবাইকে জানানোর চেষ্টা করি। তার মধ্যে একটা হচ্ছে ভুয়া এবং মিথ্যা মামলা করা, আরেকটি হচ্ছে মিথ্যা মামলা করে অর্থাৎ হয়তো মামলাটি হয়তো সঠিক কিন্তু সেখানে অনেক ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করে এক ধরনের মামলা বাণিজ্য করা। সেটার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যত বড় বড় আইনজীবী আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে, অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা একটি সিআরপিসি-তে একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছি। একটা হত্যা মামলা যখন দায়ের করা হয় সেটা তদন্তে দুই-চার বছর লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একধরনের মামলা বাণিজ্য থাকে। এখানে যারা আসামি হন তারা কয়েকবছর ধরে একটা আশঙ্কার মধ্যে থাকেন যে, কখন গ্রেপ্তার হবে বা মামলা বাণিজ্য হয় কিনা। সেটার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা একটা নতুন বিধান করেছি। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, এই নতুন বিধানে বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনও মামলার বিষয়ে উনার যদি মনে হয় করা যৌক্তিক, তাহলে উনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলতে পারেন যে মামলার তদন্তের বিষয়ে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে। সেই প্রাথমিক রিপোর্ট যখন তদন্ত কর্মকর্তা জমা দেবেন তখন পুলিশ কমিশনার কিংবা পুলিশ সুপার তাকে বলবেন যে, এই প্রাথমিক রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে। 

তিনি আরও বলেন, জমা দেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যদি মনে হয় মামলার মধ্যে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে তার মধ্যে ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগই আসলে নেই, সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে ট্রায়াল স্টেজেই ওই মামলা থেকে আসামিদের মুক্ত করে দিতে পারবেন।

আসিফ নজরুল বলেন, এই সংশোধনী কার্যকর হলে আদালত এবং পুলিশ প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে যেসব মামলায় গ্রেফতার বাণিজ্য বা মামলা বাণিজ্য হচ্ছে, অসংখ্য লোককে আসামি করা হচ্ছে, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাদের আদালত বিচার শুরু করার আগে মুক্তি দিতে পারবে। 

তিনি বলেন, এর ফলে ভুয়া মামলা থেকে আশা করি, রেহাই পাওয়া যাবে। তার মানে এই না যে তদন্ত থেমে থাকবে। তদন্ত শেষ হওয়ার স্টেজে পুলিশ যদি দেখে যাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে আসলেই পরবর্তী সময়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে, পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার সময় সেসব ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করে জমা দিতে পারবে।