চট্টগ্রামে জুলাই সনদ নিয়ে এক মঞ্চে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতবিনিময়

ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে জুলাই সনদ ঘিরে প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে বসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, জাতীয় পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চুক্তির ভিত্তি রচনায় এই সনদ একটি ঐতিহাসিক দলিল হয়ে উঠতে পারে। বক্তারা সনদে সামাজিক চুক্তির প্রতিফলন, সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মাণের প্রস্তাব তুলে ধরেন।
শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ‘জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হল’-এ ‘জুলাইয়ের সামাজিক চুক্তি: জুলাই সনদের জরুরত’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহযোগিতায় ওই মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করে জুলাই নেটওয়ার্ক।
ওই মঞ্চে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা একত্রিত হয়ে আলোচনা করেন। প্রতিনিধিরা ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা ও দেশের পুনর্গঠন ও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
সভায় রিফাত হাসান বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র কেন সরকারের দেওয়া টাইমলাইনের ভেতরে হল না, তার কৈফিয়ত পর্যন্ত দিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা তাদেরকে অবিশ্বস্ত ও অনির্ভরযোগ্য করে তুলেছে, জনগণের কাছে। আমি মনে করি, এই অবিশ্বস্ততা তৈরি হলে, পুরো উপদেষ্টা পরিষদের পদত্যাগই করা উচিত।
তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের চেয়েও দরকার বোঝাপড়া। ঐক্য প্রায় সম্ভব না ধরনের ইউটোপিয়া। রাজনৈতিক দলগুলো, এবং আমরা নাগরিকরা কোন কোন বিষযে একমত হতে পেরেছি, যে কারণে আমরা একটা রাষ্ট্র গঠনে একমত হতে পারলাম, কিন্তু এই সোশাল কন্ট্রাক্টটা ইতিহাসের কারণেই ভুলে যেতে বসেছি আমরা, জুলাই সনদে তা আমাদের সেই ন্যাশনাল হোপ ও সামাজিক চুক্তির ইশারা থাকতে হবে, স্রেফ ঐক্যপ্রক্রিয়া নয়।
আলোচনায় তিনি জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রে কী কী থাকতে হবে, তার বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সভায় উপস্থিত অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু এ ধরনের সর্বদলীয় মতবিনিময় সভা সকল রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মতপার্থক্য থাকেলও ঐক্য ছিকই বজায় আছে বলেন।
জুলাই সনদের বিষয়ে তিনি আহত ও শহীদদের স্বীকৃতির পাশাপাশি বলেন, বাংলাদেশে মূলত ঢাকা কেন্দ্রীক ন্যারেটিভ দেখা যায়। কিন্তু জুলাই আন্দোলন সবার। সবার গল্পই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সনদে কালেক্টিভ একটা ন্যারেটিভ থাকতে হবে, যেখানে সবার সব অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান রাষ্ট্র পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক সুযোগ। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের এবং এই অভ্যুত্থানের পেছনে যে গণআকাঙ্ক্ষা তার প্রতিফলন থাকতে হবে জুলাই অভ্যুত্থানের সনদ বা ঘোষণাপত্রে।
বক্তারা বলেন, জুলাই সনদের চারটি মূল গন্তব্য হবে। একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ভূমিকা রাখা। রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তি নির্মাণ। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হওয়া। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান গড়ে তোলা।
জুলাই সনদে কী থাকতে পারে তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন বক্তারা। তার মধ্যে আছে, জুলাইয়ের শহীদদের স্বীকৃতি। আহতদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা। অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও প্রেক্ষাপট। নতুন সংবিধান বা জুলাইয়ের সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ইত্যাদি।
সভা শেষে জুলাই নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সভার আলোচনার ভিত্তিতে একটা খসড়া ‘জুলাই সনদ বিষয়ক প্রস্তাবনা’ তৈরি করে তা রাজনৈতিক দলসমূহের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো হবে।
সভায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক জোট, পেশাজীবী এবং সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, এমপাওয়ারিং আওয়ার ফাইটারসের সংগঠক কলি কায়েস, স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির (স্যাড) ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম, কবি ও শিক্ষক মাইন উদ্দিন জাহেদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মূকাভিনেতা দেওয়ান মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আর রাজী, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, গণঅধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাবেদ আহমেদ, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা জবিউল হাসান, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক জুবাইরুল হাসান আরিফ, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য হাসান মারুফ রুমি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আমির আব্বাস, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংগঠক হুজ্জাতুল আবির ও নাগরিক ঐক্যের জেলা সমন্বয়ক নুরুল আফসার মজুমদার স্বপন।