Logo
Logo
×

সংবাদ

তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ যুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ০১:০২ পিএম

তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ যুক্ত

সাবেক তিন সিইসি: কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, এ কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল

নির্বাচন পরিচালনার নামে জনগণের ভোটাধিকার হরণ এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে বিএনপি দায়ের করা মামলায় এবার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ যুক্ত হয়েছে। সঙ্গে যোগ করা হয়েছে ফৌজদারি আইনের অধীনে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন—তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার: কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ (২০১৪), এ কে এম নূরুল হুদা (২০১৮), এবং কাজী হাবিবুল আউয়াল (২০২৪)। তাঁদের সময়ের কমিশনাররাও মামলার আওতায় এসেছেন।

মামলার অভিযোগ ও আদালতের সিদ্ধান্ত:

 মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার বুধবার আদালতে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারা ১২০ (ক) (ষড়যন্ত্র), ৪২০ (প্রতারণা), এবং ৪০৬ (অর্থ আত্মসাৎ)-এর আওতায় অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমান শুনানি শেষে এই আবেদন অনুমোদন করেন।

প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলার পেছনের প্রেক্ষাপট:

 বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম ও নিখোঁজ বিষয়ক সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান গত ২২ জুন এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পাঁচ সাবেক আইজিপি, এবং নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ‘ভয়ভীতি, অপহরণ, নিখোঁজ, নির্যাতন এবং গায়েবি মামলার’ আশ্রয় নিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে—নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও সংবিধান ও নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। সরকারি কর্মকর্তার পদে থেকে তারা 'অবৈধ হস্তক্ষেপ' করেছে এবং ভোটারদের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেছে, যা ফৌজদারি অপরাধ।

প্রমাণ ও সাক্ষী:

মলার বাদীপক্ষ বলেছে, ভোট কেন্দ্রের ভোটার, প্রিজাইডিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই ঘটনার সাক্ষী। ব্যালট পেপারে থাকা সিল ও স্বাক্ষরের সঠিকতা যাচাই করেও সত্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব।

আসামিদের পরিচয় ও অতীত নির্বাচনগুলো

২০১৪ সালের নির্বাচন: নেতৃত্বে ছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। সেই সময় ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। এই নির্বাচনকে বিএনপি আখ্যা দেয় ‘বিনা ভোটের নির্বাচন’।

২০১৮ সালের নির্বাচন: নেতৃত্বে ছিলেন কে এম নূরুল হুদা। রাতের আঁধারে ভোট দেওয়ার অভিযোগে এই নির্বাচন পরিচিত হয় ‘নীশিরাতের নির্বাচন’ নামে। বিএনপি মাত্র ৭টি আসন পায়।

২০২৪ সালের নির্বাচন: নেতৃত্বে ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। বিএনপি ও বেশিরভাগ বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দেয়। সরকারি দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাদের বিদ্রোহীরা। এই নির্বাচন ‘আমি আর ডামি’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে।

এই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে জয়ী হয়। এরপর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও সাধারণ মানুষের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়।

পরবর্তী পদক্ষেপ:

 ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর আংশিক বাতিল করে রায় দেয়, যার ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পথ খুলে যায়।

রায়ে বলা হয়, বিগত তিনটি নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় জনগণের আস্থা ধ্বংস হয়েছে।

এরই প্রেক্ষিতে গত ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সাবেক তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা তদন্তে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন