Logo
Logo
×

সংবাদ

জরুরি সেবা চলছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে, কাল চালু হতে পারে বহির্বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ০২:০২ পিএম

জরুরি সেবা চলছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে, কাল চালু হতে পারে বহির্বিভাগ

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরুরি ইউনিটে বর্তমানে সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকলেও, আগত সকল রোগী সেই সেবার আওতায় আসছেন না। ফলে অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, যা রোগীদের চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার পর থেকে হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে এমন চিত্র ধরা পড়ে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম জানিয়েছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে বহির্বিভাগ আংশিকভাবে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশের সর্ববৃহৎ চক্ষু বিশেষায়িত এই হাসপাতালে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ২৮ মে সংঘটিত সহিংস ঘটনার পর সাধারণ রোগী এবং আহতদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে হাসপাতালের সব ধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরে গত বুধবার থেকে কেবল জরুরি ইউনিটে সীমিত চিকিৎসাসেবা পুনরায় শুরু করা হয়, তবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পরিস্থিতি এখনও ফিরে আসেনি।

আজ জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার মোট ৮৬ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে এবং ৯ জনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে জরুরি ইউনিটে ২৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের অন্যান্য সেবা বন্ধ থাকায় এই ইউনিটেও রোগীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন কিছু রোগী ভর্তি হচ্ছেন এবং কিছু রোগী ছাড়পত্র পাচ্ছেন।

ভোর থেকে হাসপাতালে দেখা যায়, ভর্তি ২৯ জনের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন। যাঁদের অবস্থা জরুরি নয়, তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা।

মাদারীপুর থেকে আসা মো. ইয়াকুব আলী জানান, তিনি আগেই জেনেছিলেন যে সংঘর্ষের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, কিন্তু সম্প্রতি সীমিত আকারে সেবা চালুর খবরে তিনি চিকিৎসার আশায় আসেন। তবে জরুরি বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁকে চিকিৎসা না দেওয়ার কথা জানানো হয়।

তিনি বলেন, ‘চোখে যন্ত্রণা সহ্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি, এখন অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই। শুনেছি কাল কিছু চিকিৎসা শুরু হবে। আজ রাতে থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে আবার আসা লাগবে। আমি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারি না।’

জরুরি বিভাগের বাইরে এখনও অন্তত পাঁচজন সাধারণ রোগী হাসপাতালে অবস্থান করছেন, যাঁরা ২৮ মে’র ঘটনার পর থেকে থেকে গেছেন এবং চিকিৎসার জন্য অপেক্ষায় আছেন।

ঈদের আগপর্যন্ত জুলাইয়ের ঘটনায় আহত ৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাদের অধিকাংশই ঈদের ছুটির আগেই হাসপাতাল ছেড়ে যান, যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে কেউ ছাড়পত্র সংগ্রহ করেননি।

সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি আহতদের ছাড়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে ছুটির পর তারা আবার হাসপাতালে ফিরলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন।

জুলাইয়ের ঘটনায় কতজন আহত ব্যক্তি বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছেন, তার নির্দিষ্ট সংখ্যা কেউ জানাতে পারেননি। তাঁরা হাসপাতালে একটি বিশেষায়িত কেয়ার ইউনিটে থাকছেন এবং সেখানে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। আজ সকালেও ইউনিটের দরজা তালাবদ্ধ ছিল।

সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে কয়েকজন নার্স ওই ইউনিটে গিয়ে তাদের খোঁজ নিতে চাইলেও কোনো সাড়া না পেয়ে ফিরে যান। তাদের মধ্যে কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা জানান, ইউনিটের ভিতরে থাকা ব্যক্তিরা কয়েকদিন ধরেই দরজা বন্ধ করে রেখেছেন এবং শুধু খাবারের সময় একজন বাইরে এসে খাবার সংগ্রহ করেন। আজ পাঁচজনের খাবার নিয়ে গেছেন একজন।

হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। আনসার সদস্য মোক্তারুল ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র জরুরি অবস্থার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, ফলে অনেক সাধারণ রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আহতদের অধিকাংশই চলে গেছেন, তবে কয়েকজন এখনও ভেতরে অবস্থান করছেন এবং বাইরে আসছেন না।

হাসপাতালের পরিচালক জানে আলম জানান, জরুরি ইউনিট থেকে যতটা সম্ভব চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা চালু না থাকায় রোগীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণভাবে পুনরায় চালু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জানে আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে বহির্বিভাগ সীমিত আকারে চালু করতে পারব। সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার থেকে হাসপাতালের সকল সেবা পূর্ণমাত্রায় চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন