মাস্ক-ট্রাম্প দ্বন্দ্বে নতুন মোড়: প্রকাশ্য বিরোধে তীব্র আক্রমণ, ইপস্টেইন কানেকশন তুলে কটাক্ষ

বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইমপিচ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং যৌন অপরাধে দণ্ডিত জেফরি ইপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে ব্যঙ্গ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছেন। এর জবাবে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, মাস্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারিভাবে দেওয়া করছাড় ও চুক্তি বাতিল করে দেবেন। বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে এই দ্বন্দ্ব নাটকীয় মোড় নেয়।
দুজনের মধ্যে আগে ভালো সম্পর্ক থাকলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা পরিণত হয় ব্যক্তিগত আক্রমণ ও বিদ্বেষপূর্ণ বাক্যবাণে। রিপাবলিকানদের বাজেট বিল নিয়ে মাস্কের সমালোচনার জের ধরেই সম্পর্কের অবনতি হয়। এতদিন পরস্পরকে সরাসরি আঘাত না করলেও, এদিন তারা মুখের লাগাম পুরোপুরি ছেড়ে দেন।
সবচেয়ে বিতর্কিত মন্তব্য আসে যখন মাস্ক তার এক্স অ্যাকাউন্টে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইপস্টেইন সম্পর্কিত নথি প্রকাশ করেনি, কারণ সেখানে ট্রাম্প নিজেই জড়িয়ে আছেন। তিনি পরে এক পোস্টে ট্রাম্পকে সরানোর আহ্বান জানিয়ে লেখেন, “সময় এসেছে বড় বোমা ফাটানোর: ট্রাম্প ইপস্টেইন ফাইলের অংশ। এটাই আসল কারণ কেন সেগুলো প্রকাশ হয়নি। শুভ দিন, ডিজেটি!”
এরপর ট্রাম্পও চুপ থাকেননি। তিনি হোয়াইট হাউসে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের সামনে মাস্কের চোখের নিচের কালশিটে নিয়ে ঠাট্টা করেন, বলেন, "তুমি একটু মেকআপ চাও না?" ট্রাম্প বলেন, তারা একসময় ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু এখন সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
ট্রাম্প আরও দাবি করেন, মাস্ক নিজের স্বার্থে বিলটির বিরোধিতা করছেন, কারণ সেটি টেসলার পক্ষে যাচ্ছে না। এমনকি ট্রাম্প মাস্কের পছন্দের ব্যক্তিকে নাসার প্রধান নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়াও বাতিল করে দেন।
মাস্ক তখনই পাল্টা জবাবে ট্রাম্পকে “অকৃতজ্ঞ” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, তাঁর আর্থিক সহায়তা ছাড়া ট্রাম্প নির্বাচনে জিততেন না। "আমার অবদান ছাড়া রিপাবলিকানরা সিনেটে সংখ্যালঘু থাকত," বলেন মাস্ক।
ট্রাম্প অবশ্য এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, পেনসিলভানিয়ায় তাঁর বিজয়ে মাস্কের অর্থের কোনো ভূমিকা ছিল না। তিনি আরও দাবি করেন, মাস্ককে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে বরখাস্ত করেছেন কারণ "তিনি হোয়াইট হাউসে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিলেন"।
উত্তরে মাস্ক লেখেন, “এটা খুবই স্পষ্ট মিথ্যা। খুবই করুণ।” এরপরই মাস্ক তাঁর ইপস্টেইন সংক্রান্ত টুইটটি করেন, যা ম্যাগা (MAGA) সমর্থকদের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার এক কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মজার বিষয়, মাস্ক নিজেও ২০১৪ সালে এক পার্টিতে ইপস্টেইনের প্রেমিকা ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন—যিনি পরে মানবপাচারের অপরাধে দণ্ডিত হন।
এই প্রকাশ্য সংঘাতের পেছনে রয়েছে এক সময়কার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মাস্কের তৈরি “আমেরিকা প্যাক” ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করেছিল, যদিও এই তহবিলের বাস্তব প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এদিকে, ডানপন্থী লেখিকা অ্যাশলে সেন্ট ক্লেয়ার—যিনি মাস্কের ১৪তম সন্তানের মা এবং তাঁর বিরুদ্ধে ভরণপোষণের মামলা করেছেন—তিনিও ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে পোস্ট করেন, “ব্রেকআপের টিপস দরকার হলে বলো।”
এ সময় টেসলার শেয়ারের দাম একসময় প্রায় ১৫% পড়ে যায়, যেটা ট্রাম্পের মন্তব্যের সঙ্গে সময় মিলিয়ে দেখা গেছে। যদিও স্পেসএক্সের শেয়ার বাজারে না থাকলেও, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান