Logo
Logo
×

সংবাদ

নতুন সংজ্ঞায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা, সহায়ক ব্যক্তিরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

নতুন সংজ্ঞায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা, সহায়ক ব্যক্তিরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে এ সরকার গঠনে সহায়তা করা ব্যক্তিদের 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এই সংজ্ঞা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সংশ্লিষ্ট নতুন অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা আইন মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করেছে।

মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষিত করা হলেও তিনি তখন পাকিস্তানে বন্দি থাকায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ হন প্রথম প্রধানমন্ত্রী। অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম প্রথম আলোকে জানান, নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা—তাজউদ্দীন, মনসুর, কামারুজ্জামান ও নজরুল ইসলাম—সবাই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র স্বীকৃতি পাবেন। মুজিবনগর সরকারের অধীনস্থ কর্মকর্তারা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

তিনি আরও বলেন, হালনাগাদ তালিকা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কর্মচারী পূর্বে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন, যা বর্তমানে সংশোধন করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। এই সংশোধনীতে কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি; বরং মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের পরিস্কার শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, মুজিবনগর সরকারের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হয়েছে—এ ধরনের খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং নতুন অধ্যাদেশে তাদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে নিশ্চিতভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজের পোস্টে অধ্যাদেশের স্ক্রিনশটও যুক্ত করেছেন এই ভুয়া খবর খণ্ডনের প্রমাণ হিসেবে।

সংশোধিত অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পাঁচটি ভিন্ন শ্রেণি নির্ধারিত হয়েছে:

১. বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি পেশাজীবীরা যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে বিশেষ অবদান রেখেছেন;

 ২. মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত, চিকিৎসক, নার্স এবং সহকারী কর্মীরা;

 ৩. স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্বাচিত এমএনএ ও এমপিএ, যারা পরবর্তীতে গণপরিষদের সদস্য ছিলেন;

 ৪. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা;

 ৫. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আগে যেসব খেলোয়াড়—যেমন মোহাম্মদ জাকারিয়া পিন্টু, কাজী সালাহউদ্দিন এবং এনায়েতুর রহমান খান—'বীর মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এখন থেকে তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হবেন।

নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বলতে বোঝানো হয়েছে:

 যাঁরা ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত সময়ে দেশের অভ্যন্তরে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, অথবা ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় সহযোগী—রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

এই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবেন সশস্ত্র বাহিনী, ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস), পুলিশ, মুক্তিবাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার এবং মুজিবনগর সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও।


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন