Logo
Logo
×

সংবাদ

দ্য ওয়াল প্রতিবেদন

৫ আগস্ট কি করেছিলেন ওবায়দুল কাদের, কিভাবে বাঁচলেন

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম

৫ আগস্ট কি করেছিলেন ওবায়দুল কাদের, কিভাবে বাঁচলেন

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন প্রাণ রক্ষার্থে পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল-এর নির্বাহী সম্পাদক অমল সরকারের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এটিই তাঁর প্রথম গণমাধ্যমে বক্তব্য।

তিনি বলেন, “৫ আগস্ট যে শিক্ষার্থী-প্ররোচিত গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল, তা মূলত পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি ওইদিন সত্যিই ভাগ্যবান ছিলাম, কারণ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। নিজ বাড়ির পরিবর্তে পাশের একটি বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিই, যেখানে চারপাশ থেকে মিছিল ছুটে আসছিল।”

ওই বাসায়ও হামলা হয় বলে উল্লেখ করেন কাদের। তিনি বলেন, “তারা জানত না আমি সেই বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছি। তারা আমার মূল বাড়ি লুটে নেয়। আমি ও আমার স্ত্রী বাথরুমে গিয়ে আত্মরক্ষা করি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সেখানে কাটাতে হয়। পরে যখন হামলাকারীরা বাথরুম পর্যন্ত পৌঁছায়, আমার স্ত্রী অসুস্থতার কথা বলে তাদের ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা জোর করে ঢোকার হুমকি দেয়। শেষে আমি বলি, দরজা খুলে দাও।”

“তারা বাথরুমে ঢুকে প্রথমে আগ্রাসী আচরণ করে। কেউ বলে, 'নেত্রী চলে গেলেন, আপনি গেলেন না কেন?' পরে হঠাৎ করে তাদের মনোভাব পাল্টে যায়—তারা ছবি তুলতে শুরু করে, সেলফি নেয়। কেউ কেউ আবার আমাকে সেনাবাহিনীর হাতে বা জনতার হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল।”

পরবর্তীতে একদল যুবক তাকে কালো মাস্ক ও লাল ব্যাজ দিয়ে ছদ্মবেশে বাইরে নিয়ে যায়। পথে নিরাপত্তা চেকপোস্ট পেরোনোর সময় তারা ‘চাচা-চাচি অসুস্থ’ বলে চালিয়ে দেন। “হঠাৎ করে একটা খালি অটোরিকশা এসে পড়ে—এটাকেই ভাগ্য বলতে হয়,” বলেন কাদের।

এমন পরিস্থিতিতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া নিয়ে কাদের বলেন, “সত্যিই কল্পনাতীত সৌভাগ্য ছিল সেদিন। তারা বাথরুমে পর্যন্ত চলে এসেছিল, কিন্তু তবুও আমি বেঁচে যাই।”

তিন মাস তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন বলে জানান। তখনকার শ্রমিক অসন্তোষ ও কর্মজীবীদের ক্ষোভ পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং ভেবেছিলেন কীভাবে সংগঠিত কিছু করা যায়। তিনি বলেন, “আমি দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলাম, নেত্রীর পরপরই। এর মধ্যে আমার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক হত্যা মামলাও দায়ের হয়।”

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যগত জটিলতা ও নিয়মিত ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় তিনি দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে ৯ মাস কলকাতায় ছিলেন বলেও জানান।

তিনি বলেন, “পরবর্তীতে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন আমি আবার ভারত এসেছিলাম, এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবেও এসেছি।”

পালানোর পর তিনি কোথায় গিয়েছিলেন জানতে চাইলে বলেন, “আমি রাতেই ওই স্থান ত্যাগ করি। বিষয়টা কেউ ফাঁস করেনি—এটাও ছিল অপ্রত্যাশিত। ছেলেগুলোর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল কিনা—জানিনা। থাকলে আমি চিনতাম।”

তাঁর ছাত্রলীগ-যুবলীগকে রাস্তায় নামানোর সিদ্ধান্ত কি জনবিক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, “আমি কখনও বলিনি ছাত্রলীগ দিয়ে অভ্যুত্থান দমন করতে। ইউটিউবে একজন ব্যারিস্টার বলেছেন, আমি নাকি এমন নির্দেশ দিয়েছি, কিন্তু ভিডিওতে এর কোনো প্রমাণ নেই।”

তিনি যোগ করেন, “আমি তখন পার্টির দায়িত্বে ছিলাম। দলীয় কার্যালয়, সেতু ভবন, বিটিভি অফিসে হামলা চলছিল। আমি কি চুপ করে থাকতাম? নেত্রী ও দলকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য ছিল।”

১৫ বছরের শাসনকালে বৃহৎ জনমত গড়ে উঠেছে, আপনারা বুঝলেন না কেন—এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, “এটা হঠাৎ বিস্ফোরণ ছিল, কোটা ইস্যু দিয়ে শুরু হয়ে একদফা দাবিতে গিয়ে শেষ হয়। গোয়েন্দা ব্যর্থতা থাকলেও এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল।”

তিনি বলেন, “নেত্রীর নির্দেশ মোতাবেক আমি দায়িত্ব পালন করেছি। জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে আমার ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তবে আমি চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি।”

নির্বাচন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, “সমালোচনা হবেই। তবে আমাদের উন্নয়ন—এই ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাত-দিনের মতো বদলে গেছে। নেত্রী যা দিয়েছেন, তার তুলনা হয় না।”

দীর্ঘ সময় নীরব থাকার প্রসঙ্গে কাদের বলেন, “অনেকেই তা নিয়ে কথা বলেছে, কিন্তু এটা হয়তো রাজনৈতিক প্রতিযোগিতারই অংশ। প্রধানমন্ত্রী নিজেই আমার খোঁজ নিয়েছেন এবং আমার অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।”


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন