Logo
Logo
×

সংবাদ

ভারত-পাকিস্তান-মিয়ানমারের কাছ থেকে কি বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে?

Icon

সুবাইল বিন আলম

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০১:৩২ পিএম

ভারত-পাকিস্তান-মিয়ানমারের কাছ থেকে কি বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে?

আবারও ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছিলো।  যুদ্ধ কখনোই কাম্য না। এতে শুধু নিজের না, আশেপাশের এলাকাতেও বিভিন্ন ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়, এবং সাধারণ মানুষের জীবনহানি তো কারো কাম্য না। এখন যুদ্ধ থামলেও এই বিদ্যমান অবস্থা নিয়ে যে অচলাবস্থা, তা দুই দেশকেই পিছিয়ে দিতে পারে। 

একটা কথা আছে, “যে কোন বিপদ নতুন সুযোগ নিয়ে আসে।“ বাংলাদেশ যেমন বিপদে আছে, তেমনি এই দেশের জন্য এই তিন দেশের যুদ্ধ সুযোগও নিয়ে এসেছে। আমরা যদি সুযোগ নিতে পারি, এই দেশের অর্থনীতির জন্য তা বেশ ভালোই হবে। 

পাকিস্তান: পাকিস্তান তাদের ওষুধের জন্য ভারতের উপর বেশ ভালোই নির্ভরশীল। ২০২৪ এর এপ্রিল থেকে ২০২৫ এর জানুয়ারী পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতে থেকে আমদানী করছে ৪৪৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওষুধ। যার মধ্যে ফার্মা প্রোডাক্ট ২০২৪-এ ছিলো ১২৯ দশমিক ০৪ মিলিয়ন। বাংলাদেশ থেকে এই আমদানি ছিলো ২০২৪ সালে মাত্র ৬ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার। যেহেতু ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, বাংলাদেশ পাকিস্তানের জাহাজ চলাচল ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন হয়েছে, এবং যুদ্ধের জন্য তাদের এই বছর আরও বেশি ফার্মা প্রোডাক্ট লাগবে। আমাদের থেকে সস্তায় আর কে দিতে পারবে তাদের?

বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা গত বেশ কয়েক বছর পাকিস্তানের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের থেকে তুমুল প্রতিযোগীতার মুখে পড়ছিলো। যুদ্ধাবস্থায় এই অর্ডার সরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ২০২৪ অর্থ বছরে পাকিস্তান গার্মেন্টস থেকে রপ্তানি আয় পেয়েছিলো ১৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। আমাদের ব্যবসায়ীরা কি এই সুযোগ নিতে পারবে?

ভারত: ভারতের থেকে আসলে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি এত বেশি ,আমরা খুব বেশি সুবিধা নিতে পারবো না। ভারত ২০২৪ অর্থবছরে ১১ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছিলো বাংলাদেশে। আমরা রপ্তানি করেছিলাম ২ বিলিয়ন ডলারের একটু বেশি। কিন্তু এই অবস্থায় সাধারণত কেউ অন্য প্রতিবেশীর সাথে ঝামেলা করতে চায় না। তাই আমরা আলোচনার সময় দরকষাকষির একটা ভালো সুযোগ পাবো। এই সুযোগে আমরা আরও কয়েকটা কাজ করতে পারি। 

ভারত তাদের দেশের মধ্যে আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে, আমরাও নিরাপত্তার জন্য এই ট্রান্সশিপমেন্ট এবং ট্রানজিট বন্ধ রাখতে পারি। এই ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য চট্টগ্রাম পোর্টে জ্যাম বেধে থাকে, যার ভুক্তভোগী হই আমরাই। এছাড়া বড় লরী যাওয়াতে দেশের রাস্তাঘাটগুলা কখনোই ভালো থাকে না। নদীপথে দূষণ এবং নদী ভরাটের মতো ঘটনা ও আছে। 

 এছাড়া সাফ চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের চ্যানেল ভারতে প্রচার করার কথা থাকলেও তা হয় না। এমনকি তারা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলও  বন্ধ করে দিয়েছে।  কিন্তু বাংলাদেশ থেকে তারা প্রায় ২০০ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর এই টিভি চ্যানেল বাবদ। বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য এই চ্যানেলগুলা বন্ধ করে দিলে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না, বরং দেশীয় শিল্পের জন্য ভালো হবে। দেশী চ্যানেলে বিদেশ থেকে বানিয়ে আনা বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে। আমাদের অনেক মিডিয়া হাউজ আছে এখন, যারা দেশীয় সংস্কৃতি মেনে বিজ্ঞাপন বানালে, এই টাকা অন্তত বিদেশে যাবে না। যেসব পণ্য আমরা নিজেরা বানাতে পারি, তা কেন বিদেশ থেকে নিয়ে আসবো? 

মিয়ানমার: রেঙ্গুন থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসতে এক দিনেরও কম সময় লাগে। আগে এই জাহাজ চলাচল চালু থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা বন্ধ। বর্তমান মিয়ানমার সরকার যথেষ্ট আর্থিক সমস্যায় আছে। ওখানকার খাদ্য দ্রব্যের দাম চরম সস্তা। সাম্প্রতিক সময়ে বার্মার সরকারের সাথে আমাদের আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন আমাদের যে খাদ্যদ্রব্য আমদানী করা লাগবে, তা যদি ভালো দরকষাকষির মাধ্যমে সস্তায় আনা যায়, সরকারের চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া পাকিস্তান, চীনের মতো সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হলে এই আমদানী ব্যয় যেকোনো দেশের তুলনায় সস্তা পড়বে। উল্ল্যেখ্য যে গত অর্থবছরে আমরা আমদানি করেছিলাম মাত্র ৮০৮ কোটি টাকার মত কিন্তু ২০২১ অর্থবছরেও তা ছিলো ১১৯ মিলিয়ন ডলার। 

এছাড়া এই অবস্থা বেশি দিন চললে তিন দেশের বিনিয়োগকারীরা নতুন দেশ খুঁজবে। এই সুযোগ আমরা কেন নিবো না? স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে এই জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কিন্তু এখনো বিগত সরকারের আমলের ‘দেশ বিরোধী’ চুক্তি প্রকাশ করে নাই। এগুলা নিয়ে দরকষাকষির এখন সুযোগ এসেছে। 

বাংলাদেশের করণীয়: বাংলাদেশের প্রথম কাজ কঠোরভাবে নিজেকে নিরপেক্ষ নিশ্চিত করা। আমাদের সামরিক বাহিনীকে যেকোনো অবস্থার জন্য প্রস্তুত রাখা। পুলিশ ঠিক করতে পারছে না। আর কত দিন আর্মি নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে পুলিশকে সাপোর্ট দিবে?তারপরই আমাদের পোর্ট ম্যানেজমেন্টের দিকে নজর দেয়া। চট্রগ্রাম পোর্ট পুনঃগঠনে যে বিদেশি বিনিয়োগ আসার কথা, তা যদি আমাদের সত্যি দক্ষতা নিশ্চিত করতে পারে,তা তাড়াতাড়ি নিশ্চিত করা। আমাদের আমলাতন্ত্রকে এই সুযোগ নেয়ার জন্য প্রস্তুত করা, সাথে ব্যবসায়ীদেরও যথাসাধ্য সাহায্য করা। ভারত পাকিস্তনের সাথে যে পানি যুদ্ধ শুরু করেছে, তা যাতে আমাদের সাথে ও করতে না পারে, সেই জন্য ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের পানি কনভেনশনে স্বাক্ষর করতে হবে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং আরাকান নিয়ে যেকোনো প্রস্তাবেই সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলার সাথে ঐক্যমতের মাধ্যমে হতে হবে। আরাকানে যেকোনো সাহায্য প্রস্তাবে সাহায্য করার পূর্ব শর্ত থাকতে হবে রোহিংগাদের জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে সেফ জোন দেয়া। 

বেশ কিছুদিন এক ইউরোপীয়ান কোম্পানিতে চাকরি করার অভিজ্ঞতা হয়েছে । তাদের সারা বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বেশি মুনাফা আসতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলা থেকে। যেখানে যত রিস্ক, সেখানে মুনাফাও বেশি। এই জন্যই ট্রাম্প ভারতকে যুদ্ধবিমান বেচতে চায়, মিয়ানমারে চায়নিজ আর রাশিয়ান কোম্পানি ঘোরে। তুরস্ক রাশিয়া-ইউক্রেন দুই দিকেই তাল দিয়ে ব্যবসা করে। গল্পের সেই ‘আলু পোড়া’ সব বুদ্ধিমানরাই খেতে চায়। 

এই সরকারের কাছে আমরা যে গতি আশা করেছিলাম, তা তাদের আমলাতন্ত্রের জন্য অনেক স্থবির। এই বছর আমাদের জিডিপি কমছে। দেশ বাস্তবিক অর্থে টিকে আছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং পাচার কমিয়ে ফেলার উপর। এছাড়া মানুষ এখনো এই সরকারকে নিজেদের মনে করে। এই আস্থা নিয়ে তারা যদি এই সংকটে দ্রুত মেটাতে পারে, আমাদের দেশের জন্য ভালো কিছুই নিয়ে আসবে। 


সুবাইল বিন আলম, টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলাম লেখক

ইমেইলঃ [email protected]


Logo

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন