নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে নির্বাচন ভবনের সামনে এনসিপির বিক্ষোভ

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পুনর্গঠন ও দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর ইউনিটের আয়োজনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। শুরুতে প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী অংশ নিলেও পরে সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২০০-তে পৌঁছে।
কলাবাগান অঞ্চল থেকে আসা মাসুম বিল্লাহ বলেন, “এই ইসি অবৈধ আইন অনুসারে গঠিত এবং তাদের কার্যক্রম নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা এর অবিলম্বে পুনর্গঠন চাই।”
শ্রমিক শাখার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবু আবদুল্লাহ জানান, “যে ইসি গঠন হয়েছে বেআইনিভাবে, তাকে মানা যায় না।”
পল্লবী থানা থেকে অংশ নেওয়া রেহানা আক্তার রুমা বলেন, “আমরা বাধ্য হয়েছি এখানে দাঁড়াতে। এ কমিশন পরিবর্তন ছাড়া শান্তি নেই।”
রমনা থানা থেকে আসা চিকিৎসক ইশরাত জাহান বলেন, “আমি একজন মা হিসেবে এসেছি। বড় বড় দলের ব্যর্থতায় আমরা এনসিপিতে এসেছি। এই ইসি একটি বিশেষ দলকে সহায়তা করছে। আমরা নারীরা প্রয়োজনে পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় বসব।”
এই অবস্থান চলমান রয়েছে ঢাকা দক্ষিণে ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে শপথ না দেওয়ার প্রতিবাদে নগর ভবনের সামনে বিএনপি-সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে।
মিরপুর মডেল থানার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, “দেশজুড়ে আজ একটাই দাবি—এই বিতর্কিত ইসির পদত্যাগ ও পুনর্গঠন। দক্ষিণে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।”
এনসিপির দাবি, ২০২২ সালের আইনের আওতায় গঠিত এএমএম নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। তারা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী নতুন ইসি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
গুলশানের প্রতিনিধি নূরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, “জনগণের সমর্থন যাচাই করতে স্থানীয় নির্বাচন দিন।”
উত্তরা পূর্বের প্রতিনিধি মাহিন সরকার বলেন, “এই ইসি আওয়ামী লীগ সরকারের মতো চলছে। আমরা চাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এরপর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে।”
তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, “১৭ বছরেও আপনারা স্বৈরতন্ত্র হটাতে পারেননি। রাজনৈতিক ভাষা ব্যবহার করুন।”
হাতিরঝিলের প্রতিনিধি জিয়াউল হুদা বলেন, “ইসিতে এমন লোক রয়েছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তারা নিরপেক্ষতার পরীক্ষায় ব্যর্থ।”
রূপনগরের তৌহিদুর রহমান বলেন, “আমরা অতীতে রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজনে আবার দেব। ইসি নির্লজ্জভাবে পক্ষপাত করছে।”
মিরপুরের রাসেল খন্দকার বলেন, “দক্ষিণ সিটির মানুষ সেবা পাচ্ছে না। বিএনপি যদি জনপ্রিয় হয়, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিক।”
ধানমন্ডির প্রতিনিধি জসিম নায়েদ বলেন, “এ দেশে আজ পর্যন্ত কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আট মাসে নাগরিকরা সেবা পায়নি, তাই স্থানীয় সরকারের ভোট প্রয়োজন।”
গেণ্ডারিয়ার নাজমুল ইসলাম বলেন, “নতুন বাংলাদেশে পক্ষপাতের কোনো স্থান নেই।”
একই এলাকার কামরুল হাসান বলেন, “হাসিনাকে আমরা সরিয়েছি, এখন ইসির পালা। পালানোর সুযোগ পাবেন না।”
মোহাম্মদপুর থেকে আসা আবু সুফিয়ান বলেন, “সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে ইসি পুনর্গঠন জরুরি। 'অবৈধ' ভোটে নির্বাচিত মেয়র কিভাবে বৈধ হয়?”
কেন্দ্রীয় নেতা আল আমিন টুটুল বলেন, “জনদুর্ভোগের আন্দোলন জনগণের সমর্থন পাবে না। আমাদের লক্ষ্য স্থানীয় নির্বাচন—যাতে মানুষ সেবা পায়।”
খিলক্ষেতের তৌফিকুল ইসলাম বলেন, “এই ইসি কখনো নিরপেক্ষ ছিল না। ইশরাক অবৈধ ভোটকে বৈধ করার চেষ্টা করছেন।”
শাহরিয়ার শুভ বলেন, “ইসি এখন বিএনপির কণ্ঠে কথা বলছে। এই অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক।”
এনসিপি নেতাকর্মীরা শ্লোগান তোলেন:
“হাসিনার কমিশন মানি না, চাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখনই।”
এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নির্বাচন ভবন এলাকায় সকাল থেকেই সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সড়কে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসানো হয়। পুলিশ ছাড়াও কোস্ট গার্ড, র্যাব, বিজিবি এবং সেনা সদস্যরা প্রস্তুত অবস্থানে ছিলেন।
পূর্বপটভূমি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকায় দক্ষিণ সিটির নির্বাচনে ইশরাক হোসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাপসের কাছে পরাজিত হন। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর ২৭ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল তাপসের জয় বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে এবং পরে ২৭ এপ্রিল ইসির গেজেটে তাঁর মেয়র হওয়া ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শপথ না হওয়ায় বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।
এনসিপি বলছে, এই গেজেটের মাধ্যমে ইসি পক্ষপাত দেখিয়েছে—এ কারণেই তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।