Logo
Logo
×

সংবাদ

ভারত থেকে ‘পুশ ইন’ নয়, কূটনৈতিক পদ্ধতি হস্তান্তর চায় সরকার

Icon

মুক্তাদির রশীদ, সাতক্ষীরা থেকে

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম

ভারত থেকে ‘পুশ ইন’ নয়, কূটনৈতিক পদ্ধতি হস্তান্তর চায় সরকার

বয়েসিং ভাসমান বিওপি উদ্বোধনের একটি চিত্র। ছবি: বাংলা আউটলুক

গত ১০ দিনে ভারত থেকে প্রায় ৪০০ জন নারী পুরুষ ও শিশুকে কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সরকার ও তার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ । 

এ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আজ শনিবার (১৭ মে) সকালেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে ‘পুশ ইন’ বা জোর করে ঢুকিয়েছে আরও বেশ কয়েকজনকে। বাংলাদেশ সরকার এর পরিবর্তে পুশ আউট বা জোর করে ভারতে ঢুকিয়ে দেওয়ার কোনো চেষ্টা করবে না। 

বাংলাদেশ সরকার বলছে, অবৈধভাবে অবস্থান করছে এমন কাউকে পাওয়া গেলে নয়া দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করে কূটনৈতিক ভাবে তা সমাধান করবে। 

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বলছে, পুশ ইন বা জোর করে বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকিয়ে দেওয়া নারী-পুরুষ ও শিশুদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি নাগরিক দাবি করলেও বিষয়টি যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে ও কূটনৈতিক পদ্ধতিতে করার জন্য ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শনিবার সাতক্ষীরা জেলার ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তগুলো পররাষ্ট্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিদর্শন করেছেন। 

একইদিনে তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের  (বিজিবি) জন্য ভাসমান সীমান্ত চৌকি উদ্বোধন করেন। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

পুশ ইন প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের প্রধান থাকা অবস্থায়ও ভারত একই পদ্ধতিতে পুশ ইন কৌশল অবলম্বন করে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারত মান্দারবারি সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশ ইন করেছিল। সেখানে আমি পরিদর্শন করেছি। ভারতকে আমরা জানিয়েছি- আমাদের কোনো বাংলাদেশি যদি তাদের (ভারতে) ওখানে থেকে থাকে তাহলে প্রোপার চ্যানেলে পাঠান। যেমন ভারতের যারা বাংলাদেশে আছে তাদের আমরাও প্রোপার চ্যানেলে পাঠাই। আমরা কাউকে পুশ ইন করি না।’

গতকাল শুক্রবার আপনারা দেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে ভারত পুশ ইনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিজিবির সাথে, আনসার এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ভারত পুশ ইন করতে পারেনি—উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। 


তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই যদি সহযোগিতা করেন তাহলে ভারত পুশ ইন করতে পারবে না। বিজিবির সঙ্গে জনগণ এবং সাংবাদিক ভাই-বোনদের সহযোগিতা দরকার।’

পুশ ইন ঠেকাতে প্রতিবাদমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ডিপ্লোমেটিক সল্যুশনে (কূটনীতিক সমাধান) ইতোমধ্যে চিঠি লেখা হয়েছে। কূটনীতিক সমাধানের জন্য এ বিষয়ে আমাদের অ্যাম্বাসিডর, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’ 

আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এটা (পুশ ইন) ওরকম উসকানি মনে হচ্ছে না। যেহেতু এর আগেও উনারা (ভারত) পুশ ইন করেছিল অনেক আগে; যে সময় পুশ ইন করেছিল সে সময় আমি বিজিবির ডিজি ছিলাম।’

অনেক বছর আগে করেছিল কিন্তু হঠাৎ এই সময় কেন আবার পুশ ইন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছুদিন আগে শুনছেন গুজরাটে বাঙালি কলোনির মতো ছিল (বাঙালি বস্তি)। গুজরাটে সেটা ভেঙে দেওয়ার পরেই এটা (পুশ ইন) শুরু হয়েছে।’ 

ইউএনএসিআরের কার্ড হোল্ডারদেও পুশ ইন করা হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যে প্রতিবাদ পাঠিয়েছে। এর ভেতর কিছু রোহিঙ্গা চলে আসে। যেসব রোহিঙ্গা আমাদের দেশে ছিল তাদেরও পাঠিয়েছে আবার ভারতীয় রোহিঙ্গাদেরও পাঠিয়ে দিচ্ছে। এজন্য আমরা এটার প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি।’

বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয় আছে কি না যাদের পুশ ব্যাক করা হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয় একেবারেই নাই আমি বলবো না, আপনাদের অনুরোধ করবো যদি থাকে জানান আমরাও যেন প্রোপারওয়েতে (নিয়ম মাফিক) পাঠাতে পারি।’

ভারত যেহেতু পুশ ইন করছে বাংলাদেশও ভবিষ্যতে পুশ ব্যাক করবে কি না—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার দেশের নাগরিক হলে পুশ ব্যাক করার কোনো অধিকার নেই। অবৈধভাবে ভারতীয় যারা বাংলাদেশে আছে তাদেরকে ভারতের মতো পুশ ব্যাক করবো না, তাদেরকে প্রোপার চ্যানেলে পাঠাবো। অবৈধভাবে পাঠানো আইনত সিদ্ধ নয়।’ 

অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিজিবির যশোর রিজিয়ন কমান্ডার, খুলনা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার, নীলডুমুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, আরবিজি কোম্পানির অধিনায়ক, বিজিবির অন্যান্য পদবীর কর্মকর্তা ও সৈনিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজিবি প্রধান সাংবাদিকদের জানান, তার বাহিনী পুশ ইন ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে তথ্যের জন্য জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে। 

সুন্দরবনে বিজিবির ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন করলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন সংলগ্ন জল সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন করেছেন। 


আজ সকালে বিজিবির রিভারাইন বর্ডার গার্ড (আরবিজি) কোম্পানির দায়িত্বপূর্ণ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বাংলাদেশ-ভারত জল সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের মুখে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। 

ভাসমান বিওপি উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের সংযোগস্থলে বিজিবির “বয়েসিং ভাসমান বিওপি” এর শুভ উদ্বোধন করা হলো। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে এই ভাসমান বিওপিটি একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশনাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যা জলপথে টহল ও নজরদারির সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত হলেও সুন্দরবনের বিস্তৃত জলাভূমি ও নদীবেষ্টিত সীমান্ত এলাকায় স্থলপথে নিয়মিত টহল প্রদান অনেকটাই কঠিন। এই ভাসমান বিওপি চোরাচালান, মানবপাচার, বনজ সম্পদ লুণ্ঠন এবং অন্যান্য সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর প্রতিক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ-ভারতের ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৮০ কিলোমিটার নদীপথ, যার মধ্যে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থিত। এর আগেও কাচিকাটা ও আঠারোভেকিতে দুটি ভাসমান বিওপি স্থাপন করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বয়েসিং-এ তৃতীয় ভাসমান বিওপিটি চালু হলো।

এছাড়া বিজিবির অধীনে একটি বিশেষ ‘রিভারাইন বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন’ গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে, যা ভবিষ্যতে জলভিত্তিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকার মনে করে, ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ কেবল একটি স্থাপনা নয় বরং এটি একটি কৌশলগত নিরাপত্তা উদ্যোগ, যা সীমান্ত এলাকায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ। এটি দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক ও কার্যকর নিরাপত্তা সংস্কৃতি গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ভাসমান বিওপি সম্পর্কে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, বিজিবির একটি রিভারাইন বর্ডার গার্ড কোম্পানি আছে, যেটা মূলত সুন্দরবন এলাকায় পাহারা দেওয়া, টহল করা, চোরাচালান প্রতিরোধ করা, যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে কাজ করছে। এই কোম্পানির অধীনে কৈখালিতে একটি স্থল বিওপি এবং কাচিকাটা ও আঠারভেকিতে দুটি ভাসমান বিওপি আছে। 

সুন্দরবনের রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং চ্যানেলে দিয়ে চোরাচালানের বেশ বড় একটা চক্র সক্রিয় ছিল। এটা প্রতিরোধ করার জন্য বয়েসিং খালের মুখে আরও একটি ভাসমান বিওপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আজ এই বিওপিটি উদ্বোধনের মাধ্যমে ভাসমান বিওপি তার কার্যক্রম শুরু করলো। এই বিওপির মাধ্যমে সুন্দরবনে চোরাচালান প্রতিরোধ সহ সব ধরনের অপরাধ দমন আরও সুন্দর ও সহজতর হবে বলে আশা রাখি—যোগ করেন তিনি।

সাম্প্রতিককালে সীমান্ত দিয়ে পুশ ইনের ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘মূলত সিলেটের বিয়ানীবাজার, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রৌমারীর প্রত্যন্ত চর এলাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবসতিহীন এলাকা দিয়ে পুশ ইনের ঘটনা ঘটেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রতিনিয়তই নিয়ম বহির্ভূতভাবে পুশ ইনের ঘটনা ঘটছে; আজকে সকালেও কিছু পুশ ইন হয়েছে। আমাদের সীমান্তটা এতো বিস্তৃত যে প্রতিটি জায়গায় গার্ড করা সম্ভব না। তারপরেও বিজিবি সদস্যরা যথাসাধ্য প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী সাধারণ জনগণ, আনসার ও পুলিশ সদস্যরাও পুশ ইন রোধে বিজিবিকে সহায়তা করছে।’

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে থেকে থাকে তবে নিয়মমাফিকভাবে হস্তান্তর-গ্রহণের মাধ্যমে ফেরত প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকেও সার্বিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফ্ল্যাগ মিটিং ও প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেছি।’ 

সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার, টহল তৎপরতা ও জনবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি বিজিবিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন