Logo
Logo
×

সংবাদ

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল: ইতিহাসে প্রথম ঘটনা বলে মন্তব্য প্রধান বিচারপতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১২:০৬ পিএম

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল: ইতিহাসে প্রথম ঘটনা বলে মন্তব্য প্রধান বিচারপতির

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে বাতিল হয়েছে—এমন মন্তব্য করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন পুনরুদ্ধারের আপিলের শুনানিকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা, যেখানে আদালতের রায়ের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।”

এদিন জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

এর আগে, ২০২৪ সালের ৭ মে আপিল বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার শুনানির জন্য ১৩ মে তারিখ নির্ধারণ করে। যদিও এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়েছিল ১২ মার্চ, পরে তা স্থগিত হয়।

গত বছরের ২২ অক্টোবর জামায়াতের বাতিল হওয়া নিবন্ধন পুনরুজ্জীবিত করে আপিল বিভাগ, যা দলটির আইনি লড়াইয়ের পথ উন্মুক্ত করে।

জানা যায়, ১৯৮৬ সাল থেকে দলীয় প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে আসছে জামায়াত। নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর দলটিকে সাময়িকভাবে নিবন্ধন দেয়। তবে পরে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি এবং ইসলামী জোটসহ ২৫ জন ব্যক্তি হাইকোর্টে ওই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ জামায়াতকে দেওয়া নিবন্ধনকে অবৈধ ঘোষণা করে। একই বছরের ৫ আগস্ট জামায়াতের করা আপিল চেম্বার আদালত খারিজ করে। ২ নভেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হলে জামায়াত নিয়মিত আপিল করে।

ফলে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিতে পারেনি। পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকেও নির্বাচন বর্জন করে।

নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে, যেখানে বলা হয়—হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন আইনত অবৈধ।

এরপর ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকটি ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্ট ব্যবহার করবে। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে অন্য কাউকে এ প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ফলত, ২০১৭ সালের ৯ মার্চ ইসি নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করে।

এ নিয়ে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি জামায়াতের তৎকালীন মহাসচিব ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতীক বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি, যাদের জন্য ৫০টি প্রতীক বরাদ্দ রয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য রয়েছে ২৫টি প্রতীক। তাতে কোথাও দাঁড়িপাল্লা নেই। নিবন্ধনের আবেদনে আগ্রহী আরও ৪৬টি দল সময় চেয়ে আবেদন করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে দলীয় প্রতীক ও নিবন্ধন ছাড়াই স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত জামায়াতে ইসলামী।

২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।

এছাড়া, ২০২৩ সালের ১ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত জানায়।

তবে একই বছরের ২৮ আগস্ট এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে জামায়াত ও শিবিরের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।


Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন