ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ
সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান মানবজমিনের প্রধান সম্পাদকের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। আজ শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির অয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এই আহ্বান জানান।
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বেশি দিন চললে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমাদের রাজনীতিতে, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি প্রস্তাব রাখবো, অধ্যাপক ইউনূস যেন সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ইতিহাস যুদ্ধ করে না। যুদ্ধ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কিন্তু ইতিহাসের দরকার আছে। ইতিহাসকে বাদ দেয়া যাবে না। নতুন ইতিহাস লিখতে হলে পুরনো ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। ভারতীয় গণমাধ্যমেই দেখেছি যে, ভারতে সামনে দুটো নির্বাচন আছে। বিহার ও পশ্চিববঙ্গে। দুটোই রাজনৈতিক দিক থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য চ্যালেঞ্জ।
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, এই যুদ্ধ পাকিস্তানকেও রক্ষা করতে পারে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কিন্তু নির্বাচিত নন। ইমরান খান এখন জেলে। তার এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইমরান খানের রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দেরও ফয়সালা হয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী সামনের কাতারে চলে আসছে। পাকিস্তানের জনগণ এখন কী বলবে? তারা বলবে দেশ রক্ষা করেছে আমাদের সেনাবাহিনী। সেজন্য দুই দিকেই রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। রাজনীতি বাদ দিয়ে ঐতিহাসিক কারণ লেখা যাবে না। আর ইতিহাস লিখতে হলে রাজনীতি লিখতে হবে।
মানবজমিন প্রধান সম্পাদক বলেন, এবারের যুদ্ধের দুটো দিক। ভুয়া সংবাদ অন্যতম। আরেকটা হচ্ছে এআই। আমরা নিজেরা যাচাই বাছাই করে দেখতে পাচ্ছি এবার যুদ্ধ হচ্ছে এআই’র মাধ্যমে। এটার একটা ব্যবসা আছে। এই যুদ্ধ যদি চলতে থাকে আমরা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
তিনি বলেন, এই যুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বেশি। কারণ আমাদের কোনো একটা বক্তব্য, কোনো একটা সিদ্ধান্ত স্পর্শকাতর কোনো বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেটা আমরা আশা করি না। আশা করি যে, আমরা সতর্ক থাকবো। পুশ ইন চলছে। পুশ ইনকে বাধা দিতে গিয়ে আমরা এমন কোনো কাণ্ড না ঘটাই যেটা সামাল দিতে পারবো না।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যে সকল মসজিদ ধ্বংস হয়েছে সেই সব মসজিদেই এই দিন পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ব্ল্যাক আউটের মধ্যেই সংহতি প্রকাশের জন্য ফজরের ওয়াক্তে একত্রিত হয়েছিল পুরো এলাকার বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কোনো উস্কানিতেই মুসলিম-হিন্দুর যুদ্ধ হিসেবে বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, তবে বিজিপি সরকার কর্তৃক ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করে ভারতীয় মুসলমানদের স্বস্তি প্রদান করা উচিত। তাই এই দুই দেশে অবস্থানকারী মুসলমান ও হিন্দুরা যার যার অবস্থান থেকে ধর্মীয় উত্তেজনা পরিহার করে এই যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত। তা না হলে বিশ্ব এই দুই পারমাণবিক শক্তির সংঘাতের ভার বইতে পারবে না।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের মূল কারণ রাজনৈতিক নয় ঐতিহাসিক’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ’র বিতার্কিকগণ অংশগ্রহণ করেন। এতে জয়লাভ করেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা।