পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র কমিটির জরুরি বৈঠকে বসছে

দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)-এর জরুরি বৈঠকে বসছে পাকিস্তান। শনিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই বৈঠক আহ্বান করেন, যা বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং পারমাণবিক সম্ভাবনার ইঙ্গিতবাহী।
এর আগে ভোররাতে পাকিস্তান দাবি করে, তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগারও রয়েছে। ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নূর খান ঘাঁটি, পাঞ্জাবের পাঠানকোট বিমানঘাঁটি এবং কাশ্মীরের উধমপুর বিমানঘাঁটিকে প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে উল্লেখ করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারতের আগ্রাসনের জবাবে এই সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এনসিএ বৈঠক একটি কূটনৈতিক ও সামরিক বার্তা—যা পারমাণবিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে। স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ আসফান্দিয়ার মির বলেন, “এটি এক ধরনের পারমাণবিক সংকেত, যা পাকিস্তানের 'ফার্স্ট ইউজ' (প্রথম ব্যবহার) নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে সংঘাতের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেল।”
এদিকে ভারত সরকার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানায়, পাকিস্তান স্পষ্ট আগ্রাসনের পথে হাঁটছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, সীমান্তে ড্রোন ও গোলাবারুদ ব্যবহারের মাধ্যমে পাকিস্তান উত্তেজনা উসকে দিচ্ছে। তারা আরও জানায়, পাকিস্তানের ছোড়া গোলায় জম্মু অঞ্চলে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
প্রতিশোধ নিতে ভারতও পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালানোর দাবি করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের মুরিদ, নূর খান ও শোরকোট ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে আকাশপথে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসলামাবাদের কাছে অবস্থিত ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে রাজধানীজুড়ে। শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, বাজানো হয়েছে সতর্কতামূলক সাইরেন।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের ছোড়া অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সফলভাবে প্রতিহত করেছে এবং যেগুলো আঘাত হেনেছে, সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতি ছিল সীমিত।
পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তারা বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হানেনি; কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত সামরিক অবকাঠামোগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমাদের প্রতিক্রিয়া ছিল সংযত ও নির্ভুল, উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
ভারত-পাকিস্তানের এই পাল্টাপাল্টি হামলা ইতোমধ্যেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বশেষ সংঘর্ষটি হয়ে দাঁড়িয়েছে গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে জটিল এবং বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো এখন দুই দেশকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
সামরিক উত্তেজনার এই পর্যায়ে এনসিএর বৈঠক এবং পারমাণবিক হুমকির আবছা ছায়া স্পষ্ট করছে—দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এক সংকটজনক মোড় নিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় কতটা প্রস্তুত, এবং দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোথায় দাঁড়িয়ে?