নগদে ভর করে দেশি-বিদেশি শেল কোম্পানির বিনিয়োগ, অনিয়মের শেষ নেই

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জনপ্রিয় একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান (এমএফএস ‘নগদ’। দীর্ঘ সময়ে বিতর্ক ছিল প্রতিষ্ঠানটি মালিকানা সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, নাকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের। পরবর্তিতে ২০২১ সালের ১৬ আগস্টে আন্তঃসংস্থার বৈঠকে নগদের মালিকানা বিরোধের অবসান হয়।
সেই সময় মালিকানা বিরোধের অবসান হলেও নগদের নানা অনিয়ম ছিল আড়ালেই। কিন্তু গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই সেই আড়াল ভেঙে যায়। বেরিয়ে আসে নগদের নানা অনিয়মের তথ্য। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। আর এসব কারণে হিসাব মিলছে না ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ পরিচালনায় যে প্রশাসক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি বসিয়েছে, তাদের পরিদর্শনে এসব অনিয়মের তথ্য ওঠে এসেছে। বেরিয়ে এসেছে নগদের শেয়ার লেনদেনে ব্যাপক অনিয়মের চিত্রও।
কাগুজে কোম্পানি ফিনটেক হোল্ডিংস লিমিটেডের কারসাজি
নিজেদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, ফিনটেক কোম্পানি হোল্ডিংস হলো সফটওয়্যার সেবা প্রদনকারী প্রতিষ্ঠান। এদের কাজ হলো আর্থিক পরিষেবা সংস্থাগুলিকে পরিষেবা, পরামর্শ এবং আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন সমাধান দেওয়া। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি নগদে মোট শেয়ারের ৩ দশমিক ২ শতাংশ বা ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে।
যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেখানো হয়েছে বনানীর ৩৬, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর ডেল্টা ডালিয়া টাওয়ার (Delta dahlia tower)। ঠিকানা অনুযায়ী মঙ্গলবার বহুতল এ ভবনটিতে এই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে এই ভবনেই নগদের হেড অফিস।
ভবনের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বাংলা আউটলুককে বলেন, আমি ৭ বছর ধরে এই ভবনে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করি। তবে ফিনটেক হোল্ডিংস লিমিটেড নামে কোনো প্রতিষ্ঠান এখানে নেই। আমি কখনো এই নামও শুনিনি।
আরজেএসসি তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই নিবন্ধন পায়। নিবন্ধন পাওয়ার সময়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন মো. নাসির উদ্দিন। যদিও ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর সব শেয়ার হস্তান্তর করার কারণে চেয়ারম্যানের পদ থেকে বাদ পড়েন। পরবর্তীতে এডন কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ড্রেডগিং লিমিটেডের (adon construction and dredging ltd) পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন সেলিনা আক্তার।
সেলিনা আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় বাংলা আউটলুক প্রতিবেদকের। তিনি কবে থেকে ফিনটেক হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান হয়েছেন তা জানাননি। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন এই প্রতিষ্ঠানটির তিনি চেয়ারম্যান। যতি প্রতিষ্ঠানটি কিসের ব্যবসা করে তা তিনি বলতে পারেননি।
শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির এমডি এসএম কামালকে চেনেন কিনা জানতে চাইলে সেলিনা আক্তার বলেন, ‘তার সঙ্গে দেখা হয়নি। তিনি বসেন এক জায়গায় আমি আরেক জায়গায়।’
একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে আছেন সারওয়ার রহমান দিপু। তার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বাংলা আউটলুককে তিনি বলেন, আমি এত ডিটেইলস জানি না কোনটার ডিরেক্টর আমি। এরপর তিনি কল কেটে দেন।
নগদে আরও যেসব কোম্পানির নয়ছয়
নগদের ৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক ব্লু ওয়াটার হোল্ডিংস লিমিটেড ( Blue Water Holdings Ltd)। আরজেএসসিতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেওয়া রয়েছে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, গুলশান-২। যদিও কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ হচ্ছে বনানীর একটি সড়ক, গুলশান-২এমন কোনো সড়ক নেই। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে রয়েছেন নাহিম রাজ্জাক।
নগদের আরেক শেয়ার হোল্ডার হলো তাসিয়া হোল্ডিংস লিমিডেটে (TASIA Holdings Ltd). এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের পরিমাণ ২ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ মিশুক। তার শেয়ারের পরিমাণ ৪৭৫০০টি। এছাড়া পরিচালক হিসেবে রয়েছেন রোকসানা কাশেম টুম্পা। পরিচালক হিসেবে তিনি ২৫০০ শেয়ারের মালিক।
তাসিয়া হোল্ডিংসের হেড অফিসও বনানীর ডেল্টা ডালিয়া টাওয়ারে। এখানেই নগদের হেড অফিস। অফিসটির দ্বিতীয় তলায় গিয়ে তাসিয়া হোল্ডিংসের একটি অফিস কক্ষ পাওয়া যায়। আনুমানিক ৫০০/৬০০ স্কয়ার ফিটের অফিসটিতে গিয়ে মঙ্গলবার দেখা যায়, একটি রুমে মাত্র দুজন ব্যক্তি বসে আছেন। বাকি ৩০/৪০ চেয়ার খালি ছিল।
ভবনটির দাড়োয়ানের কাছে তাসিয়া হোল্ডিংস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আওয়ামী সরকারের আমলে অফিসটি ব্যাপক জমজমাট ছিল।এখন নাম মাত্র চলে।’
কারণ হিসেবে যা জানা যায়, তা হলো এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের খুবই ঘনিষ্ঠ লোক।
নগদের বর্তমান শেয়ার
নগদ লিমিটেডের বর্তমানে সাধারণ শেয়ারের (ordinary share) পরিমাণ ১৬ কোটি ৭৯ লাখ। টাকায় এর পরিমাণ ১৬৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যার প্রতিটি শেয়ারের ফেস ভেল্যু ১০ টাকা। নগদে দশটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। যার মধ্যে দেশি পাঁচটি এবং বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান।
দেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ারের পরিমাণ ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- তাসিয়া হোল্ডিংস লিমিটেডের ২ দশমিক ৪, ফিনটেক হোল্ডিংস লিমিটেডের ৩ দশমিক ২, ব্লু ওয়াটার হোল্ডিংস লিমিটেডের ৬, সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (sigma engineers ltd) ১৫ দশমিক ৩ এবং ইএসওপি হোল্ডিংস লিমিটেডের (ESOP Holdings ltd) ২ দশমিক ২ শতাংশ।
এছাড়া বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ার। এর মধ্যে ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের কোম্পানি মিয়ার্স হোল্ডিংস লিমিটেডের (mieresholdings ltd) একাই শেয়ারের রয়েছে ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার প্ররিমাণ সবমিলে ১ শতাংশেরও কম। তবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- চৌধুরী ফ্রন্টিয়ার ম্যানেজমেন্ট এলএলসি (ইউএসএ), সেঞ্চুরি অনলাইন লি. (হংকং), চৌধুরী --ফ্রন্টিয়ার হোল্ডিংস লি. (ইউএসএ), চৌধুরী বাংলা ফিনটেক এলএলসি (ইউএসএ)।
এছাড়া নগদ লিমিটেডের অগ্রাধিকার শেয়ার (Preference share) হোল্ডার রয়েছে ছয়টি। তাদের ১০ টাকা দরে প্রতি শেয়ারে মোট বিনিয়োগ রয়েছে ৮৮ লাখ টাকা। যার মধ্যে তাসিয়া হোল্ডিংসের ৩০ দশমিক ৪, সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের ৪২ দশমিক ৮ এবং মিয়ার্স হোল্ডিংসের ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ শেয়ার হলো কোম্পানির মালিকানার একটি মৌলিক অংশ। এই সাধারণ শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানির একজন অংশীদার হওয়া যায় এবং এই ধরনের শেয়ার হোল্ডারদের নির্দিষ্ট কিছু অধিকার পেয়ে থাকে।
অগ্রাধিকার শেয়ার হোল্ডাররা সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের তুলনায় অগ্রাধিতার পায়। এই অগ্রাধিকার সাধারণত লভ্যাংশ বণ্টন ও কোম্পানি বিলুপ্তির সময় মূলধন বণ্টনে পেয়ে থাকে।
শেয়ার মালিকানায় সন্দেহজনক লেনেদেন
ক্যান্ডেল স্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার লিমিটেড হলো বাংলাদেশি একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি। ২০২১ সালের ৭ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর—এই সময়ে সর্বমোট ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আকারে নগদ লিমিটেডের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংকের হিসাবে জমা করে। এর বিপরীতে বিভিন্ন তারিখে ৪৫০ কোটি টাকার কমার্শিয়াল পেপার ইস্যু করা হয়। যার সুদের হার ৬ শতাংশ।
অবশিষ্ট ৫০ কোটি টাকার বিপরীতে ৬২ কোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ১৬০ টাকার অভিহিত মূল্যের সাধারণ শেয়ার ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির এসব শেয়ার ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের অনুকূলে স্থানান্তর করা হয়।
নগদের প্রশাসক টিমের তদন্তে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ৫০০ কোটি টাকার অধিক বিনিয়োগের বিষয়টি সামনে আসে। শুধু তাই নয়, স্বল্প সময়ের মধ্যে কমার্শিয়াল পেপার ইস্যু ও তা শেয়ারে রূপান্তর এবং এক মাসের ব্যবধানে পুরো শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়টি সন্দেহজনক প্রতীয়মান হয়।
যেভাবে ক্যান্ডেল স্টোনের শেয়ার সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের অনূকূলে যায়
২০২০ সালের ৪ জুন সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের ১ লাখ ২৫ হাজার অগ্রাধিকার শেয়ার, সৈয়দ আরশাদ রেজার ১ লাখ ২৫ হাজার ও মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের ১ লাখ ২৫ হাজারসহ—মোট ৩ লাখ ৭৭ হাজার শেয়ার বাংলাদেশি কোম্পানী সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়।
২০২২ সালের ১০ মার্চ শেয়ার প্রিমিয়ামের বিপরীতে বোনাস শেয়ার ইস্যু করা হয় এবং সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স বোনাস শেয়ার হিসেবে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার ৯৩০টি সাধারণ শেয়ারের মালিকানা লাভ করে। ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর ক্যান্ডেল স্টোনের ৬ কোটি ২১ লাাখ ২২ হাজার ৫১৬টি সাধারণ শেয়ার সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের্ অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়।
২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি নগদ লিমিটেড সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণগ্রহণের একটি চুক্তি সম্পাদন করে। মাত্র ছয়দিন পরে ২২ জানুয়ারি ওই চুক্তি সংশোধিত হয়ে ২৫ কোটি টাকার পরিবর্তে ৪০০ কোটি টাকার ঋণসীমা পুনঃনির্ধারিত হয়। উভয় ঋণের সুদের হার ০%।
২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স নগদ লিমিটেডের ২০ শতাংশ সাধারণ শেয়ার ৫০০ কোটি টাকায় সাবস্ক্রাইব (subscribe) করবে মর্মে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে একই বছরের 0২০ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ২৩৬.১৫ কোটি টাকা ঋণ আকারে নগদ লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে জমা করে।
পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের ২৩৬.১৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে কোম্পানির ২০ শতাংশ শেয়ারের সমান ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ২৩৭টি সাধারণ শেয়ার ইস্যু করা হয়।
এরপর ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল ১ কোটি ৯ লাখ সাধারণ শেয়ার সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে বাংলাদেশি কোম্পানি ফিনটোমোকে (Fintomo) এবং ২০২৪ সালের ২ জুন সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের ৭ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার মিয়ার্স হোল্ডিংসে হস্তান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে প্রশাসকের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, ৫০০ কোটি টাকায় ২০ শতাংশ শেয়ার দেওয়ার চুক্তি হলেও ২৩৬ কোটি টাকায় ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা দেওয়া হয়। মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে ৩টি চুক্তি, ক্যান্ডেল স্টোনের মালিকানাধীন শেয়ারসমূহ সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের নিকট হস্তান্তর এবং সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মালিকানাধীন শেয়ার ফিনটোমো ও মিয়ার্সকে হস্তান্তরের পুরো বিষয়টি সন্দেহজনক।
মিয়ার্স হোল্ডিংস লিমিটেড
আরজেএসসি’র তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩০ জুন ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের মিয়ার্স হোল্ডিংস লিমিটেড নগদ লিমিটেডের ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়।
২০২০ সালের ২৯ জুলাই কোম্পানিটি ৩ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় ১ লাখ ৯৯ হাজার অগ্রাধিকার শেয়ার ক্রয় করে। ২০২২ সালের ১০মার্চ মিয়ার্সের অনুকূলে ৩০ লাখ ৩৪ হাজার সাধারণ শেয়ার বোনাস শেয়ার আকারে ইস্যু করা হয়।
২০২৪ সালের ২ জুন সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের ৭ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার এবং রেনোয়ার কনসাল্টিং প্রোপ্রাইটারি লিমিটেডের (Renoir Consulting Pty. Ltd) ৪ কোটি ১৮ লাখ শেয়ার মিয়ার্সের অনুকূলে স্থানান্তর করা হয়।
সন্দেহজনক যে তথ্য উঠে এসেছে
নগদ লিমিটেড ক্যান্ডেল স্টোনের অনুকূলে ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ৫০০ কোটি টাকা সমমূল্যের শেয়ার ইস্যু করা হয়। একই বছরের ২৭ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ শেয়ার সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের অনুকূলে স্থানান্তর করে।
নগদ সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সাথে ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি—মাত্র ৮দিনের ব্যবধানে দুইটি ৫০০ কোটি টাকায় ২০ শতাংশ শেয়ার চুক্তি হয়। এর মধ্যে ২৩৬ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেই ২০ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করা হয়।
আবার ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে ১ কোটি ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬টি সাধারণ শেয়ার ফিনটোমোকে এবং ২০২৪ সালের ২ জুন ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩৭ টি শেয়ার মিয়ার্সকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মিয়ার্স ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের একটি কোম্পানি। আর ক্যান্ডেল স্টোন বাংলাদেশি একটি কোম্পানি যা আরেকটি বাংলাদেশি কোম্পানি সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্সকে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স বিদেশি কোম্পানি মিয়ার্সকে শেয়ার হস্তান্তর করে।
এছাড়া কানাডিয়ান কোম্পানি স্টলওয়ার্ট লিমিটেডের (Stalwart Ltd) এবং সিঙ্গাপুরের কোম্পানি ফিনক্লুসন ভেঞ্চার প্রাইভেট লিমিটেডের (Finclusion Ventures PTE) শেয়ার মিয়ার্সকে হস্তান্তর করা হয়।
বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকে
গাইডলাইনস ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশনস (জিএফইটি)-২০১৮ অনুযায়ী কোনো বিদেশি কোম্পানির নামে শেয়ার ইস্যু ও শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্টে তথ্য দাখিল করা বাধ্যতামূক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, কোনো প্রাইভেট কোম্পানিতে যেটা শেয়ার বাজার তালিকাভুক্ত নয় বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হস্তান্তরের ১৪ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট, এমওইউ অফ শেয়ার সেল-পারচেজ এগ্রিমেন্ট এবং ফর্ম-সি ফর এনকেশমেন্ট অব ইনওয়ার্ড রেমিটেন্সেস দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নগদ লিমিটেডে যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে কোনটিরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য নেই।
যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এসব কোম্পানির কোনো তথ্য পাননি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে নগদের প্রশাসক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার বাংলা আউটলুককে বলেন, সরকার পতনের পর আমাকে নগদে প্রশাসক হিসেবে বসানো হয়েছে। ইতপূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকা নগদ ই-মানি তৈরি করায় মামলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘শেয়ার কারসাজি হয়ে থাকলে বিষয়টি দুদক দেখবে। বর্তমানে নগদে ফরেন্সিক অডিট চলছে। ফরেন্সিক অডিট হলে পুরোপুরি চিত্র বেরিয়ে আসবে।’
নগদের ডিজিটাল যত জালিয়াতি
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিয়োগ পাওয়া প্রশাসক নগদ পরিচালনার পাশাপাশি আর্থিক অনিয়ম খুঁজে বের করা শুরু করেন। এতেই উঠে আসে বড় অঙ্কের ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়টি।
নথিপত্রে বলা হয়েছে, ডাক অধিদপ্তর ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজির মধ্যে ২০১৭ সালে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, ব্যাংকে যত টাকা জমা থাকবে, ঠিক তার সমপরিমাণ ই-মানি ইস্যু করা যাবে। তবে প্রশাসক দল দেখতে পায় নগদে অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি ইস্যু করা হয়েছে।
প্রশাসক দলের পক্ষ থেকে ডাক অধিদপ্তরকে আরও জানানো হয়েছে, অনুমোদন ছাড়াই নগদে ৪১টি পরিবেশক হিসাব খোলার মাধ্যমে ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। এসব পরিবেশক হিসাবের দায়িত্ব ছিল সরকারি ভাতা বিতরণ করা।
জানা গেছে, নগদের মালিকানায় আওয়ামী লীগের নেতারা যুক্ত থাকায় তৎকালীন সরকার ভাতা বিতরণের জন্য নগদকে বেছে নিয়েছিল। আর এ সুযোগে সরকারি ভাতার একটা অংশ নিয়ে জালিয়াতি করা হয়।