ভাঙনের ঝুঁকিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুই কিলোমিটার বাঁধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম
-6819f020365ca.jpg)
শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের পুরো দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। ইতিমধ্যে নদীর তলদেশের মাটি সরে গিয়ে বাঁধের কয়েকটি অংশে গভীরতা সৃষ্টি হওয়ায় কিছু জায়গায় ধস নেমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর আশঙ্কা, আসন্ন বর্ষায় বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে পারে।
এদিকে নদী ভেঙে বাঁধের কাছে চলে আসায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি ও সাত্তার মাদবর বাজার এবং আশপাশের অন্তত ৬০০টি বসতবাড়ি।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা প্রান্তের নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় গত বছর নভেম্বরে ওই বাঁধের ১০০ মিটার অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে। এরপর ওই বাঁধটিতে সমীক্ষা চালায় পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)।
সমীক্ষায় দেখা যায়, বাঁধসংলগ্ন এক কিলোমিটার এলাকায় নদী গভীর হয়ে গেছে এবং তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। অন্য এক কিলোমিটার এলাকায় নদী বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে এবং সেখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পাউবো সূত্র আরও জানায়, শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে সেনানিবাস, সার্ভিস এরিয়া-২, দক্ষিণ থানা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এসব অবকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণের পর ২০১২ সাল থেকে নদীভাঙন শুরু হয়। এ ভাঙন রোধে ভাটির দিকে দুই কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে, যার সঙ্গে পরবর্তীতে নদী শাসনের বাঁধ যুক্ত করা হয়।
মাদবরকান্দি গ্রামের রাজু মাদবর বলেন, অস্থায়ীভাবে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন স্রোতের দিক পরিবর্তনে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। বর্ষায় পুরো এলাকা ভেঙে গেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
সাত্তার মাদবর ও মঙ্গল মাঝি বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া বলেন, এখানে প্রায় ২০০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বছরখানেক ধরে বাঁধে ফাটল দেখা দিচ্ছে, কয়েকটি অংশ ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। পানি বাড়লে বাঁধ টিকবে না। আমরা কোথায় যাব?
এ বিষয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক কিলোমিটারের নিচের অংশ থেকে মাটি সরে গেছে। বাঁধটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। কিছু অংশ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মেরামত কাজ চলছে। বাঁধটি মজবুতকরণ করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাঁধটি মজবুতকরণ করা না হলে ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ধসের বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পদ্মা সেতুর নিকটবর্তী তীর রক্ষা বাঁধটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরো বাঁধ মজবুত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।