Logo
Logo
×

সংবাদ

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট, স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট, স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারী সংস্কার কমিশন গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

নারী সংস্কার কমিশনের কয়েকটি সুপারিশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ চাওয়ার পাশাপাশি রিটে আদালতের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছে—সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ইসলামি আইনজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হোক, যেন ভবিষ্যতে ধর্মীয় ও পারিবারিক আইন সংশোধনের আগে তারা পর্যালোচনা ও পরামর্শ দিতে পারেন।

এই বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চে চলতি সপ্তাহেই শুনানি হতে পারে।

আইনজীবী রওশন আলী গত রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন।

রিটে বলা হয়েছে, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের একাদশ অধ্যায়ে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—যাতে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে—তা সরাসরি কোরআনের সুরা নিসার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এছাড়া বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও রিটে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। রিটকারীর মতে, বহুবিবাহ ইসলামি শরিয়তে অনুমোদিত বিধান। ফলে এটি সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে নির্ধারিত ধর্মচর্চার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।

রিটে আরও বলা হয়েছে, “মাই বডি, মাই চয়েস” স্লোগানকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে প্রতিবেদনে শরিয়তভিত্তিক নীতির বাইরে গিয়ে নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করা হয়েছে। যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব ইসলামি মূল্যবোধ ও সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

প্রতিবেদনে লিঙ্গ পরিচয় ও ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক ভাষা নিয়ে বলা হয়েছে, এসব অভিব্যক্তি শরিয়তের পরিপন্থী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

রওশন আলী বলেন, “প্রতিবেদনের বিভিন্ন সুপারিশ আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংবিধান এবং সমাজের ধর্মপ্রাণ মানুষের চেতনাকে আঘাত করে। এই রিট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়; এটি একটি আইনগত প্রয়াস—দেশের ধর্মীয় ভারসাম্য, সাংবিধানিক সম্মান এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য।”

গত ১৯ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারী সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল এর বিরোধিতা করে আসছে।

ইসলামপন্থীদের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হেফাজতে ইসলাম নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামি কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশেষ করে ইসলামি পারিবারিক আইন ও উত্তরাধিকার আইন সংক্রান্ত সুপারিশগুলো নিয়েই হেফাজতের মূল আপত্তি। জামায়াত বলেছে, কিছু সুপারিশ “গর্হিত” এবং তা সমাজকে “চরম অস্থিরতার” দিকে ঠেলে দিতে পারে।

কমিশনের উল্লেখযোগ্য কিছু সুপারিশ ছিল:

অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করে সব ধর্মের নারীদের বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করা,

সন্তানের উপর অভিভাবকত্ব নিশ্চিত করতে ১৮৯০ সালের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন সংশোধন,

ভবিষ্যৎ সরকারকে পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের সুপারিশ, যাতে নারীরা সম্পত্তিতে সমান ভাগ পান,

সংসদের আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে, এর মধ্যে ৩০০ আসনে সরাসরি ভোটে নারীদের নির্বাচন,

বিবাহিত জীবনে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা,

নারীর অবমাননাকর উপস্থাপনা থেকে বিরত থাকা,

যৌনকর্মীদের শ্রমিক মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে শ্রম আইন সংশোধন।

এ নিয়ে হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের নারী নীতির বিরোধিতার ধারাবাহিকতায় গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি মহাসমাবেশ করেছে। তারা চার দফা দাবিতে ২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।

সমাবেশে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, “নারী সংস্কারের নামে আল্লাহর কোরআনকে কটাক্ষ করা হয়েছে। এই কমিশন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে।”

‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সমাবেশে বলেন, “হেফাজত ইসলামের নারীবাদ নিয়ে আপত্তি যুক্তিসঙ্গত। ড. ইউনূস সরকার অপ্রয়োজনীয় ইস্যু তৈরি করছে। আমি বলতে চাই, নারী কমিশন গঠনের জন্য কেউ ‘জুলাই বিপ্লবে’ প্রাণ দেননি।”



Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন