ছোঁয়াচে স্ক্যাবিস রোগের প্রাদুর্ভাব কুমিল্লা ও রাজশাহীতে

কুমিল্লা ও রাজশাহী অঞ্চলে হঠাৎ করেই ছোঁয়াচে চর্মরোগ ‘স্ক্যাবিস’-এর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন শত শত রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। বিশেষ করে শিশু ও কম বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি দেখা যাচ্ছে।
স্ক্যাবিস একটি পরজীবীজনিত চর্মরোগ। সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া নামের একটি পরজীবী চামড়ার উপরিভাগে বাস করে, ডিম পাড়ে এবং সেখান থেকে রোগ ছড়ায়। এটি সহজেই এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে—বিশেষ করে স্পর্শ, একই বিছানা, তোয়ালে, বা জামাকাপড় ব্যবহার করলে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে সাত বছরের একটি শিশু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয়, পরে তার হাতে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে লাল ফুসকুড়ি দেখা দেয়। শিশুটির মা আয়শা খানম জানান, “প্রথমে পাত্তা দিইনি। পরে দেখি শরীরজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন, এটা ছোঁয়াচে স্ক্যাবিস—সবার থেকে আলাদা রাখতে হবে।”
স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জানায়, প্রতিদিন গড়ে ২০০–২৫০ জন রোগী স্ক্যাবিসের মতো চর্মরোগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশুদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ বেশি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৩০–৩৫ জন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শহরের অন্যান্য এলাকাতেও স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাশিউল আলম হোসেন। তিনি বলেন, “আগে দিনে ১–২ জন স্ক্যাবিস রোগী পেতাম, এখন পাচ্ছি ৫–৬ জন করে।”
কেন বাড়ছে সংক্রমণ?
অপরিষ্কার পরিবেশ
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা (হোস্টেল, বস্তি)
নিয়মিত গোসল না করা বা কাপড় না ধোয়া
সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘন সংস্পর্শ
লক্ষণ ও উপসর্গ
তীব্র চুলকানি, বিশেষত রাতে
লাল ফুসকুড়ি বা র্যাশ, পানির মতো তরল বের হতে পারে
শরীরের ভাঁজে বেশি দেখা যায়: আঙুলের ফাঁক, কোমর, ঘাড়, নিতম্ব, বগল, নাভি
শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বর, নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়ার সঙ্গেও স্ক্যাবিস থাকতে পারে
আক্রান্ত স্থান ঘষার ফলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
নিয়মিত গরম পানিতে গোসল
পরিস্কার কাপড় পরা ও ব্যবহৃত কাপড় গরম পানিতে ধোয়া
তোয়ালে, বিছানা, বালিশের কভার ইত্যাদি আলাদা রাখা
সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ যেন না ব্যবহার করে
ঘরবাড়ি পরিস্কার রাখা
চিকিৎসা:
স্ক্যাবিস নিরোধক ক্রিম বা লোশন সারা শরীরে লাগাতে হয়
৮–১২ ঘণ্টা পর গোসল করে ফেলা উচিত
এই প্রক্রিয়া সপ্তাহব্যাপী চালিয়ে যেতে হয়
মুখে খাওয়ার অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ নেওয়া লাগতে পারে
জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রয়োজন
চিকিৎসক ডা. হোসেন জানিয়েছেন, স্ক্যাবিস দীর্ঘদিন অবহেলা করলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হতে পারে, এমনকি কিডনি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। তিনি বলেন, “পরজীবী মরে গেলেও তার মৃতাংশ চুলকানির সৃষ্টি করতে পারে। তাই ট্রিটমেন্ট রিপিট করতেও হয়।”
স্ক্যাবিস একটি সাধারণ কিন্তু ছোঁয়াচে রোগ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এটি সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। সংক্রমণ হলে শুধু ব্যক্তি নয়, পরিবারের সবাইকে চিকিৎসা নিতে হবে—না হলে রোগ বারবার ফিরে আসবে। সূত্র: বিবিসি