Logo
Logo
×

সংবাদ

কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২২ এএম

কবি দাউদ হায়দার মারা গেছেন

নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তের পথে। শনিবার রাতে জার্মানির বার্লিন শহরের একটি বয়স্ক নিবাসে ৭৩ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।

তার ভাতিজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার জানান, স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এখনো বিস্তারিত সব জানা সম্ভব হয়নি।

দাউদ হায়দারের ভাই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আরিফ হায়দার জানান, কবির শেষকৃত্য জার্মান সরকারের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হতে পারে। তবে স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটির অংশগ্রহণের সুযোগও রয়েছে।

১৯৭৪ সালে দেশত্যাগের পর প্রথমে কলকাতায় কিছু বছর কাটিয়ে ১৯৮৭ সালে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন দাউদ হায়দার। এরপর থেকে দেশহীন নির্বাসনই হয়ে ওঠে তার নিয়তি।

চিরকুমার এই কবি দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ডিসেম্বরে বার্লিনের নিজ বাসভবনের সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। আইসিইউ থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও আর আগের মতো জীবন ফিরে পাননি।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনার দোহারপাড়া গ্রামে জন্ম নেয়া দাউদ হায়দার একাধারে কবি, লেখক ও সাংবাদিক ছিলেন। তার ১৯৭৪ সালের একটি কবিতা—‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’—তৎকালীন সরকার ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর রোষের মুখে পড়ে। ধর্মীয় অনুভূতি আহতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং ১১ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০ মে জামিন পেলেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে পরদিনই তাকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে করে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয়—সঙ্গে শুধু ৬০ পয়সা, কয়েকটি কবিতার বই, দুটো শার্ট-প্যান্ট আর একটি টুথব্রাশ।

পরে স্মৃতিকথায় দাউদ হায়দার লিখেছিলেন—“আমার কোনো উপায় ছিল না। মৌলবাদীরা হয়তো আমাকে মেরে ফেলত, আর সরকারও হয়তো চুপচাপ তা মেনে নিত।”

তার ভাই আরিফ হায়দার জানান, দাউদ হায়দার প্রতি ১-২ বছর পরপর কলকাতায় আসতেন। সাধারণত বইমেলা উপলক্ষে মাসখানেকের জন্য সেখানে সময় কাটাতেন। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০২৪ সালে।

দাউদ হায়দারের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—

 ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’, ‘সম্পন্ন মানুষ নই’, ‘নারকীয় ভূবনের কবিতা’, ‘যে দেশে সবাই অন্ধ’, ‘ধূসর গোধূলি ধূলিময়’, ‘আমি ভালো আছি, তুমি?’

 এছাড়া তার অন্যান্য রচনার মধ্যে আছে—

 ‘নির্বাসিত’, ‘Songs of Despair’, ‘এই শাওনে এই পরবাসে’, ‘Banishment’, ‘আমি পুড়েছি জ্বালা ও আগুনে’, ‘Alone in Darkness and Other Poems’, ‘Holding an Afternoon and a Lethal Firearm’, ‘Obsidian’।

আলোচিত আত্মজীবনী ‘ইল্লিন ঝিল্লিন’-এ উঠে এসেছে তার শৈশব, কৈশোর, প্রেম, কবিতাচর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ের টুকরো টুকরো কাহিনি।

দাউদ হায়দারের পরিবার ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতির ভাণ্ডার। ভাইদের মধ্যে নাট্যকার জিয়া হায়দার, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার ও কবি মাকিদ হায়দার ইতিমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন। অন্য ভাই জাহিদ হায়দার, আবিদ হায়দার ও আরিফ হায়দারও সাহিত্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।

দেশান্তরের নিঃসঙ্গ বেদনা দাউদ হায়দার হৃদয় থেকে তুলে এনেছিলেন কবিতায়।


Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন