কুয়েট উপাচার্য অপসারণে দাবি পূরণ, ৫৮ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

দীর্ঘ ৫৮ ঘণ্টা অনশনের পর বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যকে অপসারণের সরকারি ঘোষণা পেয়ে অনশন ভেঙেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান নিজ হাতে জুস পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিরসন এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ উপাচার্য অধ্যাপক এস কে শরিফুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শিগগিরই সিনিয়র অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
এই ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ ও স্বস্তি ছড়িয়ে দেয়। মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে উল্লাস শুরু হয়, শিক্ষার্থীরা মিছিল করে তাদের বিজয় উদযাপন করে এবং পরে হলে ফিরে যান।
উল্লেখ্য, উপাচার্য অধ্যাপক মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছিলেন। আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে। ওইদিন ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে সহিংসতায় আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন এবং সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর পরপরই আন্দোলন আরও জোরদার হয়। গত রোববার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। আলটিমেটামের সময়সীমা পার হলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। আন্দোলনের মাঝে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার ক্যাম্পাসে এলেও অনশন প্রত্যাহার করাতে ব্যর্থ হন।
বুধবার বিকেলে সিন্ডিকেট সভায় আন্দোলনরত ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং সব আবাসিক হল পুনরায় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একাডেমিক কার্যক্রমও ৪ মে থেকে চালু করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। একইসাথে ছাত্ররাজনীতি বিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা এবং প্রশাসনের আচরণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অবশেষে সরকারি সিদ্ধান্তে উপাচার্য ও উপ উপাচার্য অপসারিত হলে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁরা চান একটি সুষ্ঠু, সহনশীল এবং রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাপরিবেশ, যেখানে শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের অধিকার থাকবে এবং প্রশাসন দায়বদ্ধ থাকবে।