প্রশাসনের রিকুইজিশনের বাসে নাগরিক পার্টির সমাবেশে যোগদান

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে সমাবেশ করার মাধ্যমে শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন এই দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান উপলক্ষে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিপুল জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে। তবে সেই জনসমাগমে আসা বাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই সংক্রান্ত ফাঁস হওয়া একটি চিঠিতে দেখা যায়, পিরোজপুর থেকে ঢাকায় লোক আনতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বাস দিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র দিয়েছিল জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ।
সরকারি ওই চিঠিতে লেখা হয়, অস্থাবর সম্পত্রি হকুম দখল আইন, ১৯৮৮ এর ৩(১) অনুয়ায়ী সরকারি কাজে বা জনগনের সেবা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ আগামী ২৮.০২.২৫ তারিখ ০১ (এক) দিনের জন্য পিরোজপুর হতে ঢাকা গমানাগমনের জন্য পাঁচটি (০৫) পরিবহন বাস অধিযাচন।
নিচে এই আদেশের সাথে সংযোজিত তফসিলে বর্ণিত অস্থাবর সম্পত্তি হকুম দখল আইন, ১৯ সে ক্ষমতা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আমার উপর অর্ণিত হয়েছে। উক্ত সম্পত্তির মালিক দখলকারের নাম।
ক) উক্ত ২০১৫ খ্রিঃ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫:০০ টা হতে আমার কর্তৃত্বাধীন ন্যাস্ত করিবেন এবং উক্ত তারিখ অত্র কার্যালয় হইতে ইহা গ্রহণ করিবার জন্য ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে মুহাম্মদ মুসাব্বির মাহমুদ সানি, প্রতিনিধি আতীয় নাগরিক কমিটি, পিরোজপুর ০১৬১১৯৭৯৯৯৫)। এর নিকট ইহার দখল বুঝাইয়া দিবেন।’
জানা যায়, পৃথক একটি চিঠির মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জন্য আরও তিনটি বাসের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।
এসব ব্যাপারে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদ পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় যাওয়ার জন্য একটা সহযোগিতা চেয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখা থেকে বাসের রিক্যুইজিশন স্লিপ দেওয়া হয়েছে মাত্র। তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে এই সহযোগিতা চায়নি। এখানে কোনো আর্থিক বা অন্য কোন সহযোগিতার বিষয় নেই।
পিরোজপুর ট্রাফিক বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান জানান, তারা চিঠির ভিত্তিতে ৬-৭ বাস ঢাকার জন্যে সরবরাহ করেন।
এদিকে, পিরোজপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা মো. মোছাব্বির মাহমুদ সানিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রথমে কল কেটে দেন। পরে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার জন্য ডিসি এসপি গাড়ি রিকুইজিশন করে দিয়েছিল। জ্বালানি কে দিয়েছে তাও জানি না।’
এদিকে, বাস রিকুইজিশনে অন্তর্বর্তী সরকারে কোনো ভূমিকা নেই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, পিরোজপুর শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটি এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে জেলা প্রশাসন বাস রিকুইজিশনে সহায়তা করেছে। তবে জেলা প্রশাসন কোনো খরচ দেয়নি।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিষয় লক্ষ্য করছেন যে পিরোজপুরে পাঁচটি বাস রিকুইজিশন করে আনা হয়েছে এবং বলা হচ্ছে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এই রিকুইজিশন করতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়াও সরকারকে উদ্দেশ করে বলা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার এই বাস রিকুইজিশন করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে দ্ব্যর্থকণ্ঠে বলব, এখানে অন্তর্বর্তী সরকারে কোনো ভূমিকা নেই।’
প্রেস সচিব বলেন, তাঁরা এ বিষয়ে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, পিরোজপুর শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটি তাদের কাছে বাস রিকুইজিশনের জন্য চিঠি দেয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা আহত হয়েছিলেন এবং নিহত পরিবারের সদস্যরা এসে তাদের (জেলা প্রশাসনের কাছে) অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে একধরনের চাপে তাঁরা পাঁচটি বাস রিকুইজিশন করায় সহায়তা করেন। কিন্তু এসব বাসের জ্বালানি খরচ, যাতায়াতের খরচ কোনো খরচ ডিসি অফিস থেকে দেওয়া হয়নি।