Logo
Logo
×

সংবাদ

অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সরব ভারতীয় গণমাধ্যম

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২০ পিএম

অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সরব ভারতীয় গণমাধ্যম

বিগত দু বছর বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারে ধৃত অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা। ছবি: বিবিসি

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ধরা পড়ার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে ঘন ঘন উঠে আসছে। ত্রিপুরা, আসাম, দিল্লি কিংবা পশ্চিমবঙ্গ—প্রায় সব অঞ্চল থেকেই খবর আসছে যে অনেক বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ছেন। এই প্রবণতা অবশ্য নতুন নয়, তবে সম্প্রতি তা বেশি করে আলোচনায় এসেছে। 

অবৈধ অনুপ্রবেশ কি বেড়েছে?

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ সব সময়ই হয়ে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গ্রেফতারি সংখ্যা দেখে অনেকে ভাবছেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের প্রবণতা হয়ত বহুগুণে বেড়ে গেছে। যদিও বিএসএফের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত অগাস্ট থেকে ডিসেম্বর—এই পাঁচ মাসে গ্রেফতারের সংখ্যা সামান্য বাড়লেও তা গত দু-বছরের একই সময়ের তুলনায় খুব বেশি নয়।

দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ার, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটি বড় অংশ, সেখানেও সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে ধরা পড়া বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর তুলনায় ২০২৪ সালে মাত্র ২৭৮ জন বেশি গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ আবার ভারতে অবস্থানের পর নিজ দেশে ফিরতে গিয়ে ধরা পড়েন।

পাঁচই অগাস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরের পরিসংখ্যানেও (অগাস্ট থেকে ডিসেম্বর) বছরওয়ারি ফারাক খুব বেশি নয়: ২০২৩ সালে যেখানে ৮৩৩ জন ধরা পড়েছিলেন, ২০২৪ সালে তা সামান্য বেড়ে ১১০২ জন হয়েছে। বিএসএফ বলছে, ভারতের ভিসা-নীতি সাম্প্রতিক সময়ে কড়াকড়ি হওয়ায়—বিশেষ করে মেডিক্যাল ভিসা ছাড়া অন্য ভিসা কার্যত বন্ধ থাকায়—অনেকে জরুরি প্রয়োজনে অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছেন, যার ফলে এই সামান্য বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করা যায়।

‘ধরা পড়লে পড়ব!

সংবাদে অনুপ্রবেশকারীদের ধরা পড়ার খবর যেমন উঠে আসছে, তেমনই অনেকে আবার বিনা ভিসায় ঢুকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতে থেকে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কলকাতার উপকণ্ঠের একটি এলাকায় গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা আস্তে আস্তে বসতি গড়তে শুরু করেন। স্থানীয়দের হিসাবে, প্রায় দেড় দশক আগে কয়েক হাজার মানুষ সেখানেই পাকাপাকি থেকে গিয়েছিলেন। পরে অনেকেই দক্ষিণ ভারত বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে পাড়ি জমিয়েছেন, ভারতের জাল পরিচয়পত্র বানিয়ে।

ওই অঞ্চলের এক পুরোনো বাসিন্দা জানালেন, স্থানীয় বাজারে হঠাৎ দেখা পাওয়া এক তরুণ জানিয়েছেন যে তিনি আর দেশে ফিরবেন না। অনেকে আবার সীমান্ত পেরোতে গিয়ে ধরা পড়ছেন, কিন্তু ঘুষ দিয়ে জামিনে বেরিয়ে ফের এখানে থেকে যাচ্ছেন। এদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে আসেন। অভাব-অনটন কিংবা কাজের সন্ধানে আসার প্রবণতা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন—“গ্রামে থাকলে খাব কী? ধরা পড়লে পড়ব, তারপর দেখা যাবে”—এমন মনোভাব অনেকের মধ্যেই দেখা যায়।

মিডিয়ায় বেশি প্রচার কেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত পাঁচই অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ বা সন্দেহভাজন জঙ্গি কার্যকলাপের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ সময়ে কয়েকটি জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার এবং অবৈধভাবে পাসপোর্ট বা অন্যান্য পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই মিডিয়ায় এ ধরনের খবর প্রকাশ পাচ্ছে।

কলকাতা ও শিলিগুড়ি থেকে প্রকাশিত ‘এই সময়’ পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা সুরবেক বিশ্বাস জানালেন, সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের খবর সব সময়েই ছিল। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে—সেখানে সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত অভিযোগে বন্দি থাকা কিছু লোককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে খবর circulates করছে। তার মধ্যে কেউ ভারতে প্রবেশ করছে কিনা, সে বিষয়ে সতর্ক নিরাপত্তা বাহিনী। স্বাভাবিক ভাবেই ধরা পড়ার সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, মিডিয়ায় সেটিই বেশি প্রচার পায়।

পুরোনো সমস্যা, নতুন করে আলোচনায়

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের পুরোনো সমস্যা আজও সম্পূর্ণ মেটেনি। ভূখণ্ডগত কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকেই সীমান্ত পেরিয়ে এপার-ওপার যাতায়াত চলে আসছে। বিএসএফ জানিয়েছে, অনেক জায়গায় আজও কাঁটাতারের বেড়া নেই। এতদিন পশ্চিম সীমান্ত (পাকিস্তান) নিয়ে উত্তেজনা বেশি থাকায় জাতীয় পর্যায়ের মিডিয়ায় বাংলাদেশ সংক্রান্ত খবর তুলনামূলক কম ছিল। এখন পাকিস্তানকে ঘিরে আলোচনায় ভাটা পড়তেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে জাতীয় মিডিয়ার আগ্রহ বাড়ছে।

পুণের এমআইটি এডিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সম্বিত পাল বলছেন, এক সময়ে জাতীয় সংবাদমাধ্যম এ ধরণের খবরকে গুরুত্ব দিতে চাইত না। কিন্তু এখন ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যু ফিরে এসেছে। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে এই বিষয়ে প্রচার, কিংবা সাইফ আলি খানের ওপর আক্রমণে মূল অভিযুক্ত ‘বাংলাদেশি’ বলে উল্লেখিত হওয়ায় আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ফলে জাতীয়-স্তরের সংবাদমাধ্যমও এখন এই খবরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, সাম্প্রতিক গ্রেফতারের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে ঠিকই, তবে পুরোনো সমস্যা একেবারে নতুন করে শুরু হয়নি। বরং ভিসা-নীতির কড়াকড়ি ও প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলেছে। সেইসঙ্গে, মিডিয়ারও নজর এখন এই দিকে বেশি—ফলে প্রতিটি ঘটনা আগের চেয়ে বড় করে প্রকাশ পাচ্ছে। সব মিলিয়ে, একটা পুরোনো ইস্যু আবারও প্রবল আলোচনায় এসেছে ভারতের সংবাদমাধ্যমে। সূত্র: বিবিসি

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন