Logo
Logo
×

সংবাদ

খালেদা জিয়া লন্ডনের পথে, যেসব প্রশ্ন নেতাকর্মীদের মনে

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৩ এএম

খালেদা জিয়া লন্ডনের পথে, যেসব প্রশ্ন নেতাকর্মীদের মনে

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নিয়ে যেমন স্বস্তি রয়েছে, তেমনি আছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাও। কেননা দলের দুই শীর্ষ নেতা—খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান—কেউই দেশে নেই। এতে ভবিষ্যতে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে।

খালেদা জিয়া এর আগেও একাধিকবার চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেছেন। ২০১৭ সালের ১৫ই জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিতে তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি দেশে থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারেননি। এখন এমন এক সময়ে তিনি বিদেশে যাচ্ছেন, যখন বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছে, আর সরকার ঘনিষ্ঠ মহল ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’—এমন অবস্থান নিয়ে কথাবার্তা বলছে।

গত ৫ই অগাস্ট জনবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। শেখ হাসিনা নিজেও ভারতে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়ছেন, আবার সরকার ঘনিষ্ঠ একটি অংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে আরেকটি গোষ্ঠী ‘সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে’—এমন বক্তব্য দিয়ে আলোচনা জিইয়ে রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা অবশ্য বলছেন, অতীতের নানা অভিজ্ঞতা ঘিরে মানুষের মনে “খালেদা জিয়া ফিরবেন কি না” বা “ফিরতে কোনো সমস্যা হবে কি না” ইত্যাদি প্রশ্ন উঠলেও সেগুলো ভিত্তিহীন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,

“আমরা আশা করছি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে তিনি দেশে ফিরবেন এবং দেশকে নেতৃত্ব দেবেন।”

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন,

“পুরোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে দেশের মানুষ হয়তো চিন্তা করছেন। তবে এখানে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই, যদিও সতর্ক থাকতে হবে।”

উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কারণ
অনেকের মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিকভাবে ফিরতে পারবেন কি না। কারণ রাজনীতিতে ইতিপূর্বে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যখন ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত দুই নেত্রীই দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন।

এখন সরকারের বাইরে থেকে নতুন দল গঠনের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা নিয়ে বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানালেও অনেকে বলছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও ক্ষমতায় থাকাবস্থায় দল গঠন করেছিলেন। সেই সূত্রে কেউ কেউ বিএনপিকেও ‘কিংস পার্টি’ বলে উল্লেখ করছেন। তাছাড়া বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করায় দেশে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব অনুপস্থিত থাকবে—এ বিষয়টি দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করা নিয়েও গুঞ্জন চলছে। বিএনপির নেতারা অবশ্য মনে করছেন, এটি নেতিবাচক কোনো বার্তা নয়; বরং খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতেই এটি সহায়ক হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

দলীয় নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া সময়ের দাবি। রাজনীতির সাথে সরাসরি এটি যুক্ত নয়। বরং দীর্ঘদিন পর পরিবার—বিশেষ করে বড় ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি—সবার সান্নিধ্যে থেকে উন্নত চিকিৎসা নেওয়াই এখানে মুখ্য। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,

“চিকিৎসা শেষে সুস্থভাবে ফিরে তিনি বিএনপি ও দেশের নেতৃত্ব দেবেন। কোনো উদ্বেগের প্রয়োজন নেই।”

চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও বলছেন,

“খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন এবং কারাবন্দি অবস্থায় ছিলেন। তবুও দল চলেছে, কারণ তখনও তারেক রহমান দূর থেকে দলকে সুসংগঠিত রেখেছিলেন। এখনো ঠিক সেই যৌথ নেতৃত্বেই দল এগোবে।”

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, দেশ এখন এমন এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ‘বিরাজনীতিকরণ’-এর আলোচনা চলছে। ফলে দেশে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে বিএনপির শীর্ষ নেত্রীর বিদেশে যাওয়া, বিশেষ করে ‘নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে’—এই বিতর্কের মাঝখানে, স্বাভাবিকভাবেই দলের ভেতরে-বাইরে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তিনি বলছেন,

“১/১১-র অভিজ্ঞতা মানুষ ভোলেনি। এখন অন্যরাও বিএনপিকে ইঙ্গিত করে নানা কথা বলছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের বাইরে বলেই এই প্রশ্ন, উৎকণ্ঠা আরও বাড়ছে।”

কখন কীভাবে গেলেন
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের আমিরের পাঠানো একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে গতকাল ৭ জানুয়ারি রাত পৌনে ১২টায় ঢাকা ছাড়েন খালেদা জিয়ার। এয়ারবাস এ-৩১৯ মডেলের ওই বিমানে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প ও উন্নত কার্ডিয়াক মনিটরসহ জরুরি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা রয়েছে।

দীর্ঘ সাত বছর পর লন্ডনে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হবে বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানের। এরপর কিছুদিন লন্ডনে চিকিৎসা নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও আছে বলে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, চিকিৎসক দল, কয়েকজন বিএনপি নেতা, ব্যক্তিগত কর্মী এবং দুজন গৃহকর্মীও গেছন।

দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবারই জানানো হয়েছে, চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে তিনি আবার দেশে ফিরবেন। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও অতীতের নানা উদাহরণ সামনে রেখে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে যেকোনো শঙ্কা বা উদ্বেগ স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: বিবিসি

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন