ফেসবুক-ইউটিউব শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে
ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি 'টিচার্স ওয়ার্ল্ড: জার্নাল অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ' শিরোনামে একটি গবেষণার প্রতিবদেন প্রকাশ করেছেন সাইফুল ইসলাম ও এ বি এম নাজমুস সাকিব। তাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে শিক্ষার জন্য ব্যবহার করেছে।
গবেষণার ফলাফলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ধরন সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে পরিচালিত এই গবেষণায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিবর্তনের ধরন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
গবেষণার মূল ফলাফল
এই গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর জন্য কাঠামোগত জরিপ এবং আধা-কাঠামোগত সাক্ষাৎকারসহ একটি মিশ্র-পদ্ধতি পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছিল।
সামাজিক শিক্ষা তত্ত্বের (এসএলটি) মাধ্যমে পরিচালনা করা হয় এ গবেষণা। এতে ফেসবুক ও ইউটিউবের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়; যা আনুষ্ঠানিক একাডেমিক অধ্যয়ন এবং অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
তত্ত্বটি পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ ও মডেলিংয়ের মাধ্যমে শেখার উপর জোর দেয়।
ডেমোগ্রাফিক অন্তর্দৃষ্টি
উত্তরদাতাদের প্রায় অর্ধেক ছেলে-মেয়ের বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
২০ বছরের নিচে ছাত্রছাত্রীদের ১৩.১% এবং ২২ বছরের উপরে ছাত্রছাত্রীদের প্রায় ৪০% গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। স্নাতকে অধ্যয়নরত, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার সব একাডেমিক স্তরেই বিস্তৃত।
শিক্ষায় ফেসবুক
গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে, ফেসবুক একাডেমিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৯২.৩% উত্তরদাতারা তাদের পড়াশোনার উন্নতির জন্য এটি ব্যবহার করে। সাধারণত যেসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে:
· অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন।
· মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে একাডেমিক উপকরণ বিনিময় করে নেওয়া।
· লাইভ সেশনের সময় প্রতিক্রিয়া প্রদান।
· গ্রুপ আলোচনায় অংশ নেওয়া।
ফেসবুক সহযোগিতামূলক শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে, শিক্ষার্থীরা কোর্সের সামগ্রী এবং ক্লাসের বক্তৃতা লিংকগুলো আপলোড এবং বিনিময় করে নেন।
ইউটিউবের ভূমিকা বাড়ছে
একাডেমিক প্রেক্ষাপটে ফেসবুক আধিপত্য বিস্তার করলেও ইউটিউব অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় বহুল ব্যবহৃত। প্রায় ৭৫.৪% শিক্ষার্থী অনানুষ্ঠানিক পড়াশোনার জন্য ফেসবুকের উপর নির্ভর করেন, যেখানে ৭৯.২% শিক্ষার্থী ইউটিউবের দিকে ঝুঁকছেন।
জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল টেন মিনিট স্কুল, ফারজানা ড্রয়িং একাডেমি এবং ফাইভ মিনিট ক্রাফটস গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিওগ্রাফি থেকে শুরু করে স্পোকেন ইংলিশ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টিউটোরিয়াল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের কন্টেন্টের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অনেক উত্তরদাতা ইউটিউবকে "সব শিক্ষকের শিক্ষক" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিনামূল্যে, অ্যাক্সেসযোগ্য শিক্ষামূলক উপকরণগুলোর বিশাল ভাণ্ডারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
মহামারির প্রভাব
কোভিড-১৯ মহামারি শিক্ষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, লকডাউনের সময় সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মগুলো ঐতিহ্যবাহী শ্রেণিকক্ষের জায়গা নিয়েছে।
অনলাইন শিক্ষা আদর্শ হয়ে ওঠে, শিক্ষার্থীরা কোর্সওয়ার্ক, টিউটোরিয়াল ও ভার্চুয়াল গ্রুপ আলোচনার জন্য ক্রমবর্ধমান ফেসবুক ও ইউটিউবের উপর নির্ভর করেন।
এই পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতের বাধাগুলো মোকাবিলায় সামাজিক মাধ্যমকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায়েএকীভূত করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
আরও গবেষণার আহ্বান
গবেষকরা শিক্ষামূলক কার্যক্রমে লিংকডইন, হোয়াটসঅ্যাপ ও টুইটারের মতো অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা বিশ্লেষণের জন্য আরও সমাজতাত্ত্বিক গবেষণার সুপারিশ করেছেন।
তারা একাডেমিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার উপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোর গভীরতর অনুসন্ধানের ওপর জোর দেন।
এই গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বৈত ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবহারের ধরনগুলো বিকশিত হতে থাকায়, বাংলাদেশের শিক্ষায় তাদের গভীর প্রভাব থেকে যাচ্ছে।