কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সুতি ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত মীর আরিফ মিলন (৫০) উপজেলার ছয়সুতি ইউনিয়নের পূর্ব ছয়সুতি গ্রামের হাজি জমির উদ্দিনের ছেলে। মিলন ছয়সুতি বাজারের জুতা ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য। তিনি ছয়সুতি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সদস্যও ছিলেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, আজ ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ছয়সুতি ইউনিয়নে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে জশনে জুলুস ও মাহফিল আয়োজনের কথা ছিল। অপর দিকে ইমাম ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকেও একটি মাহফিলের আয়োজনের কথা ছিল। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় গতকাল রোববার দুই পক্ষের অনুষ্ঠানই বন্ধ রাখতে বলে উপজেলা প্রশাসন। পরে দুই পক্ষকেই পৃথক সময়ে অনুমতি দেওয়া হয়। আজ সকালে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে জশনে জুলুস বের হয়। তবে উপজেলা প্রশাসন মিছিলটি ছয়সুতি বাজারে প্রবেশ করতে নিষেধ করে। কিন্তু মিছিলটি ছয়সুতি বাজারে এলে ইমাম ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। এতে দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষে বাধে।
এই সংঘর্ষের সময় ছয়সুতি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া মাজার, ঘরবাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ১৫ জন আহত হয়েছে। আর আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাজিতপুরের জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে মীর মিলন নামে একজনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ইমাম ও উলামা পরিষদের নেতা মুফতি নাছির উদ্দিন রহমানিয়া বলেন, আমরা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিরাতুন্নবী মাহফিল বন্ধ রাখি। বেলা ১১টায় বেদাতিরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের মসজিদে হামলা চালায়। এ ঘটনায় বাজারের একজন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। প্রশাসনের এত নজরধারীর পরও এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমি এর বিচার দাবি করেন।
এদিকে সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হামিদ (রহ.) মাজারের খাদেম সৈয়দ ফয়জুল আল আমিন বলেন, আমাদের এখানে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী আসার কথা ছিল। কিন্তু কিছু উগ্রপন্থী এতে বাধা দেয়। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তা মেনে নিলেও আজ আমাদের ওপর তাঁরা হামলা চালিয়েছে। মাজার ঘরটি ভাঙচুরসহ আরও ১০টি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করেছে। তিনিও এর বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা ফাতেমাতুজ-জোহরা বলেন, ঘটনাস্থলসহ আশপাশে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি আরও বলেন,আজ সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অপর দিকে ইমাম ওলামাদের মাহফিলের জন্য অনুমতি দেওয়া হয় বেলা ১টার পরে। কিন্তু আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ২০-২৫ জনের একটা ছোট দল মসজিদের সামনে দিয়ে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে সংঘর্ষ বাধে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ আল আমিন হোসাইন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।